1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বাক্যে অকারণ ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বন্ধ করুন

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩

গত শনিবার (১৪ অক্টোবর ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘কলাউড়া ফ্রেন্ডস ক্লাব চ্যাম্পিয়ন’। ইংরেজি শব্দে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ মোট ১২৬ শব্দের এই প্রতিবেদনটি অনায়াসে সম্পদকীয় স্তম্ভে তোলে দেওয়া যায়। কিন্তু সম্পাদকীয়র পরিসর ছোট রাখতে তা করা গেল না। এই ১২৬ শব্দের প্রতিবেদনে ৩৩ বার ইংরেজি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, শতকরা হিসেবে তা দাঁড়ায় ২৬.১৯টি। এ মধ্যে আরবি কিংবা ফারসি শব্দের ব্যক্তি নামের শব্দ আছে ১৮টির মতো। এই ১৮টিকে ধরে হিসেব করলে শতকরা হিসেবে দাঁড়ায় ৪০.৪৭টি। যদিও একই শব্দ একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে কথা বাড়াচ্ছি না। সরাসরি বলতে গেলে, এই সংবাদ প্রতিবেদনটি প্রমাণ করছে যে, আমরা বাংলাদেশের বাঙালিরা ভাববিনিময়ের বেলায় অপরিহার্য নয় এমন বিদেশী শব্দের ব্যবহার পরিহারপটু নই। অন্তত সংবাদ পরিবেশেনেই এই নমুনাটি উপস্থিত করে বলা যায় যে, ব্যতিক্রম বাদে সাংবাদিকরা সংবাদ বা প্রতিবেদন লেখার সময় ‘বিদেশী শব্দের ব্যবহার পরিহারপটু নন। তাছাড়া ছোট সংবাদটিতে গ্রামান্তরের সংঘ কিংবা সংগঠনের দুইটি নাম আছে। সংবাদে বলা হয়েছে,‘টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ট্রাইব্রেকারে কলাউড়া ফ্রেন্ডস ক্লাব ৩Ñ১ গোলে ড্রাইভার্স ক্লাবকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়।’ বিশ^ব্যাপী ইংরেজির ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত আধিপত্যকে অস্বীকার করার কোনও উপায় আপাতত নেই। তেকারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষায় কিঞ্চিৎ পরিমাণে হলেও ইংরেজির ব্যবহার অপরিহার্য বলে বিবেচিত হতেই পারে এবং তাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাবাক্যে ইংরেজির অনুপ্রবেশের পরিমাণটিকে ‘কিঞ্চিৎ’ বলে উপেক্ষা করা যায় না। অবস্থা বিবেচনায় বলতেই হয় যে, বাংলাভাষাদেশের পরিসরে ভাষাব্যবহারে এবংবিধ বিদেশি অর্থাৎ ইংরেজি শব্দের ব্যবহারাধিক্য বাংলাভষা ভিন্ন বিশে^র অন্য কোনও ভাষায় এমন অধিক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয় না।
জানা কথা, সেই ব্রিটিশকাল থেকে অদ্যাবধি ভাষাব্যবহারে শহুরে লোকেরা কমবেশি বেলেতিয়ানা প্রদর্শনে অভ্যস্ত। কিন্তু গ্রামান্তরে কোনও সংগঠনের নাম যখন ‘কলাউড়া ফ্রেন্ডন্স ক্লাব’ কিংবা ‘ড্রাইভার্স ক্লাব’ রাখা হয়, তখন প্রকারান্তরে প্রতিপন্ন হয়ে যায় যে, বাংলাদেশে গ্রামুরেরা শহুরেদের থেকে বিলেতি কেতায় ভাষাব্যবহারে একেবারে পিছিয়ে নেই। গ্রামের লোকেরা বন্ধু, সভা, সংঘ, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ইত্যাদি শব্দে দ্যোতিত ভাববস্তুকে ইংরেজি শব্দ দিয়ে প্রকাশেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই বাস্তবতাকে বলা যায় ইংরেজির দাপট, যে-দাপটের গুণে ইংরেজি ভাষা এখনও মস্তানি করে চলেছে বিশ^জুড়ে এবং বোধ করি সব চেয়ে বেশি মস্তানি ফলাতে পারছে বাংলাভাষা দেশের পরিসরে। আর এর মূলে আছে একদা ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদের বিশ্বজুড়া উপনিবেশ স্থাপনের দখলদারিসঞ্জাত ভাষাসাংস্কৃতিক আধিপত্য। বর্তমানেও সেই সাংস্কৃতিক আধিপত্য কিংবা মেকলেচেলাপনার কেরদানি-ক্যারিশমা চলছে। অর্থাৎ ঔপনিবেশিকতা থেকে উত্তর উপনিবেশিক পর্ব পর্যন্ত অদ্যাবধি তার রেশ অপ্রতিহত আছে। শিক্ষক, সদস্য, সভাপতি, বন্ধু, সংঘ, চূড়ান্ত ইত্যাদি শব্দের ভাববস্তুকে আমরা যথাক্রমে মাস্টার, মেম্বার, চেয়ারম্যান, ফ্রেন্ড, ক্লাব ও ফাইনাল শব্দের দ্বারা অবলীলায় প্রকাশ করে চলেছি এবং বোধ করি এই প্রকরণ চলতেই থাকবো। কিন্তু বিদগ্ধমহলের ধারণা পরিপূর্ণভাবে বাঙালি হয়ে উঠার জন্যে ভাষাব্যবহারে এবংবিধ বিলেতিয়ানা প্রকাশের প্রবণতা সচেতনভাবে পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনোন্যপায় হয়ে অর্থাৎ অপরিহার্য প্রয়োজন ভিন্ন এইভাবে ভাষাব্যবহারের অকারণ ইংরেজির আধিপত্যকে বিস্তৃত করার প্রকরণে নিমজ্জিত থেকে ভাষাবিচ্ছিন্নতাগ্রস্ত হয়ে বজ্জাত হয়ে উঠার কোনও মানে হয় না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com