একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক শাল্লার নিরীহ মানুষদের হায়রানি করার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল : ‘গ্রামীণ শক্তি’র মামলায় হয়রানির শিকার নিরীহ মানুষ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “শাল্লা সদর সংলগ্ন ডুমরা গ্রামের মৃত কৃষ্ণকান্ত দাশের ছেলে কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ (৪০)। গত ২০ বছর যাবৎ ফুটপাতে চা বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। গত ৮ অক্টোবর গভীর রাতে ওয়ারেন্ট নিয়ে তার বাড়িতে হাজির পুলিশ। সহজ সরল কৃপেন্দ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে। ৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জ কোর্টে চালান করে কৃপেন্দ্র দাশকে। পরে গ্রামীণ শক্তির দায়ের করা মামলায় সৌরবিদ্যুতের ৬ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করে মুক্তি পান তিনি। কৃপেন্দ্র দাশ বলেন, আমি গ্রামীণ শক্তির নামই শুনি নাই। কোনদিন সৌরবিদ্যুৎও আনি নাই। আমার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমার মোট ১৪ হাজার টাকা খরচ হইছে। মানসম্মানও গেছে। আমি এর বিচার চাই। কৃপেন্দ্র দাশের পিতার নাম কৃষ্ণকান্ত দাশ হলেও, মামলায় লেখা হয়েছে প্রতিকী চন্দ্র দাশ।”
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে ‘গ্রামীণশক্তি’ প্রতিকী দাশের ছেলে কৃপেন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অথচ এই মামলার কারণে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছেন কৃষ্ণকান্ত দাশের ছেলে কৃপেন্দ্র দাশ। একজন মানুষের বাপের নাম একটাই থাকে, দুইটা থাকে না। কিন্তু শাল্লার এক বা একাধিক পুলিশ এই সত্যকে মানেন না। কৃপেন্দ্রকে গ্রেফতারকারি তিনি অথবা তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, এক জন্মে একজন মানুষের পিতা দুইজন হতে পারে এবং বাংলাদেশের আইনে তা স্বীকৃত। তাঁরা তাঁদের নিজেদের বেলায় এমনটা মানে কি না জানি না। সে-ব্যাপারে আমরা কীছু বলতেও চাই না। আমরা কেবল বলতে চাই যে, একজন মানুষের পিতা দুইজন হতে পারে, এবংবিধ বাস্তবতাকেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে শাল্লা পুলিশ কর্তৃক কৃপেন্দ্র দাশকে গ্রেফতারের এই ঘটনায় এবং সেটাকে কার্যকর করা হয়েছে কৃপেন্দ্রর কাছ থেকে গ্রামীণশক্তির দায়ের করা মামলায় উত্থাপিত অভিযোগ অনুসারে সৌরবিদ্যুতের ৬ হাজার টাকা আদায় করে। প্রশ্ন হলো, গ্রামীণশক্তি পক্ষ থেকে প্রতিকী দাশের ছেলের কাছে পাওনা টাকা কৃষ্ণকান্ত দাশের ছেলে কোন যুক্তিতে পরিশোধ করবেন এবং কেনই বা গ্রামীণশক্তি যে ব্যক্তির কাছে টাকা পাওনা নেই তার কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা গ্রহণ করবে? এই ঘটনায় নিঃসন্দেহে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, কৃপেন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে গ্রামীণশক্তি ও পুলিশ দুই পক্ষই জান্তে অথবা অজান্তে আইনবিরোধী কাজ করেছেন। আমরা এর প্রতিকার চাই এবং আশা করি আইন প্রয়োগকারী প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টিকে তাঁদের বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হবেন।
পরিশেষে আবারও বলি, একজনের কাছে পাওনা টাকা স্বীয় মর্জিমাফিক অন্যজনের কাছ থেকে আদায় করার কোনও অধিকার গ্রামীণশক্তির নেই এবং পাশাপাশি এবংবিধ গায়েবি অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামীণশক্তিকে ভুয়া দেনাদার গ্রেফতারের সহায়তা প্রদানও পুলিশের পক্ষে আইনসম্মত নয় এবং যে-পুলিশ আইনবহির্ভূত আচরণে সম্পৃক্ত হবেন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সময়ও বোধ করি ইতোমধ্যে সমাগত হয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ, উপর্যুক্ত উপায়ে কোনও নাগরিককে হয়রানি করার কোনও অধিকার কারও নেই বা থাকতে পারে না।