পত্রিকায় বালুপাথর ডাম্পিং সম্পর্কে খবর ছাপা হয়েছে এবং জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই ডাম্পিংয়ের কারণে পা-ারখাল বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। শিরোনাম করা হয়েছে, ‘অবৈধভাবে বালুপাথর ডাম্পিং : হুমকির মুখে পা-ারখাল বাঁধ’। এ সম্পর্কে প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।
এ-রকম প্রকৃতিবিরোধী কিংবা প্রাকৃতিক ভারসাম্যবিনাশী কর্মকা- এই দেশে হরদম চলছে। গাছ কাটা, পাহাড় কাটা, নদী-খাল দখল, বিল-বাঁদাড়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা কিংবা জল-বায়ুসহ প্রকৃতিতে যা কীছু আছে সব কীছুকে দূষিত করাÑ বাতাসে ধুলিকণা, শিসা, উচ্চশব্দতরঙ্গ (শব্দদূষণ), তেজষ্ক্রিয়তা, ওজোনস্তরবিনাশী গ্যাস ইত্যাদিÑ নির্বিঘেœ চলছে এবং দেশের আইনে এ-সমস্ত কীছু অবৈধ হলেও আইন প্রয়োগের কোনও লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বিষয়টা অনেকটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এতে করে কারও কীছু যায় আসে না। লোকে যেখানে বাস করে, যে-প্রাকৃতিক পরিসরের বস্তুসামগ্রী ব্যবহার করে বেঁচেবর্তে থাকে তার সবকীছুকে কেবল হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে না, প্রকারান্তরে দূষিত ও ধ্বংস করছে। অর্থাৎ লোকেরা ডালে বসে ডাল কাটার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। যেমন টাঙ্গুয়াকে টাঙ্গুয়াপাড়ের লোকেরা ধ্বংস করছে আজকে বেঁচে থাকার তাগিদে, ভবিষ্যতের কথা না ভেবে। পরবর্তী প্রজন্ম কী খেয়ে বাঁচবে তার পরোয়া করছে না, তারা ভুলে যাচ্ছে টাঙ্গুয়া মানুষের বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান আমিষ সরবরাহ করে থাকে, এই আমিষের উৎস ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ সহজে বেঁচে থাকতে পারবে না, জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে। এইভাবে বিবেচনা করলে সহজে প্রতিপন্ন হয় যে, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা নীতির কারণে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে আগামী জীবন। এই কারণে মানবপ্রজাতিকে কোনও কোনও চিন্তকেরা আত্মহত্যাপ্রবণ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কেবল বাংলাদেশের মানুষ নয়, সমগ্র মানব প্রজাতিকেই এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতিবিরোধী সর্বপ্রকারের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। সর্বাগ্রে বন্ধ করতে হবে পুঁজিবাদী শোষণভিত্তিক আগ্রাসন, সা¤্রাজ্যবাদী আচরণ। বন্ধ করতে হবে ইউক্রেনে সংঘটিত যুদ্ধ কিংবা ফিলিস্তিনে ইসরাইল কর্তৃক আগ্রাসন। আপাত দৃষ্টিতে সহজে বোধগম্য হয় যে, পৃথিবীতে যুদ্ধ হয় অস্ত্র বিক্রি করে উচ্চ মুনাফা অর্জনের লোভে, কিন্তু মুনাফার লোভসঞ্জাত মানুষের এই যুদ্ধলিপ্সা, শেষ পরিণতিতে গিয়ে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ভয়াবহ মাত্রায়, যা বালুপাথর ডাম্পিংয়ের কারণে কোথাও যে-মাত্রায় পরিবেশ দূষণ হয় বা প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ঘটে তার চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি। সুতরাং বালুপাথর ডাম্পিং কিংবা যুদ্ধ, যা-ই বলি না কেন, এবংবিধ সর্বপ্রকার প্রাকৃতিক ভারসাম্যবিরোধী কার্যক্রম থেকে কেবল বাংলাদেশ নয় সমগ্র পৃথিবীকেই বিরত থাকতে হবে, পৃথিবী নামক এই সবুজ গ্রহটিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে। জানা কথা, পৃথিবী না থাকলে মানুষও থাকবে না।