গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়েছে হাওর’। হাওর সংক্রান্ত এই কথাটি অর্থাৎ ধারণাপ্রত্যয়টি উৎসারিত হয়েছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রাতে দৈনিক সুনামকণ্ঠের কার্যালয়ে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা ‘শাপলা নীড়’-এর কান্ট্রিডিরেক্টর তমোকো উচিয়া-এর সঙ্গে সুনামগঞ্জের সুধীজনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত সুধীজনেরা যে মতামত দিয়েছেন, সে-মতামতের বিশ্লেষণ থেকে এমন ধারণাপ্রত্যয়ের (‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়েছে হাওর’) উদ্ভব ঘটেছে। এমনকি কবি ইকবাল কাগজী তো হাওরের জলজ ও স্থলজ জীববৈচিত্র্য বিনাশসঞ্জাত বর্তমান পরিণতিকে ‘জলের মরুভূমি’ বলে বর্ণনা করেছেন। মরুভূমি বালুর সমুদ্র, সেখানে হাতে গোণা কয়েকটি উদ্ভিদ জন্মে মাত্র, তেমন কোনও গাছপালা জন্মে না, সে-জন্য মরুভূমিকে ফারসিতে বিরান অর্থাৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাণহীন-সবুজশূন্য স্থান বলা হয়। তেমনি জলের সমুদ্র যখন মৎস্যাদি জলজ প্রাণবৈচিত্র্যের উদ্ভবরহিত জলাধারে পর্যবসিত হবে তখন তাকে ‘জলের মরুভূমি’ কিংবা ‘জলমরুভূমি’ বলা বোধ করি খুব একটা বেমানান কীছু হবে না।
এখন কথা হলো এই জলের মরুভূমিকে আবার তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। আর তার একমাত্র উপায় হবে, হাওরের উপর মনুষ্যপ্রজাতি কর্তৃক আরোপিত প্রাকৃতিক ভারসাম্যবিরোধী সর্বপ্রকার কর্মকা- প্রতিহত করা। এর কোনও বিকল্প নেই।
আমাদের দেশে বিদেশী এনজিওরা উন্নয়নের কাজ করে থাকেন। ইতোমধ্যে এনজিও তরফে হাওরের উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মাতৃহাওর টাঙ্গুয়ার উন্নয়নচর্চা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। বিদেশি সংস্থার উন্নয়নচর্চার পরিসরে টাঙ্গুয়ার জীববৈচিত্র্যের বিনাশ সাধিত হয়েছে, টাঙ্গুয়ার বর্তমান বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সেটা কাউকে বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না, সকলেই সেটা জানেন। হাওরের বিপন্ন প্রাতিবেশিক অবস্থার বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা ‘শাপলা নীড়’-এর কান্ট্রিডিরেক্টর তমোকো উচিয়া-কে আমরা নিরোৎসাহিত করছি না, বরং তাঁকে এমন কাজে উৎসাহী হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এও বলছি যে, এনজিও’র কাজের ভেতর দিয়ে হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্রম অবনতি অর্থাৎ ক্রমবিলুপ্তির বিষয়টিকেÑ যা অতীতে এখানে বাস্তবিক অর্থেই ঘটেছেÑ মাথায় রাখতে বলছি, যে-টাকে উপেক্ষা করে হাওরের উন্নয়ন চিন্তা ব্যর্থ হওয়ার সুবাদে ভারসাম্যহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে ‘জলের মরুভূমি’ বেষ্টিত জনজীবনের জটিলতাকে নিরসন অযোগ্য করে তুলবে।