সংবাদশিরোনামটি যদি এমন হয়, “শিশু ইভা’র মাথা উদ্ধার”, তবে তার তাৎপর্য কী দাঁড়ায়? এর উত্তরে কোন সত্যটি বেরিয়ে আসে? এটি কোন সমাজজাগতিক বাস্তবতার মুখোশ তোলে ধরে? আমরা প্রকৃতপ্রস্তাবে কোন সমাজপরিসরে বাস করি? যে-জননিরাপত্তার চাদর দিয়ে সমাজপরিসর ঢাকা থাকার কথা, সেটা কী তেমনি ঢাকা আছে, নাকি সে-চাদর শতচ্ছিন্ন জীর্ণবস্ত্রখন্ডে ইতেমধ্যে পর্যবসিত হয়েছে? এই সমাজ কি আসলেই মানুষ বসবাসের যোগ্যতা হারিয়েছে? একটি আট বছরের কন্যাশিশুর মাথাবিহীন লাশ ধানক্ষেতে ফেলে দেওয়া অবস্থায় পাওয়ার একদিন পর তার দেহবিচ্ছিন্ন মাথা পাওয়া গেলো অন্য কোনও পৃথক স্থানে, এমন বাস্তবতা কি প্রমাণ করে না যে, এখানে প্রতিষ্ঠিত সমাজসাংস্থিতিক পরিসর মানুষ বসবাসের যোগ্যতা হারিয়েছে? কেউ এটাকে ধর্তব্যের ব্যাপার বলে গণ্য নাও করতে পারেন। আমরা জানি, একদা এই দেশে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল এবং সে-দিন কেউ কেউ আনন্দে মিষ্টি বিতরণ পর্যন্ত করেছিলেন এবং তৎপর দায়মুক্তির বিধান দেওয়া হয়েছিল জাতীয় সংসদে বসে। আর আজ কন্যাশিশুকে অপহরণ, ধর্ষণ, খুন করা হচ্ছে এবং কারও টনক নড়ছে না। এমনি করে নীরবতার চাদরে ঢাকাপড়া জননিরাপত্তা খুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোনও যথার্থ পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও স্বাভাবিক বুদ্ধির জোরে অনুমিত হয় যে, দেশে দিন দিন মানুষ খুনের হার বাড়ছে। এইভাবে খুন থেকে শুরু করে সংঘটিত যাবতীয় দুর্বৃত্তায়নসঞ্জাত অপরাধের ফিরিস্তি দিতে গেলে কমপক্ষে এমন কয়েক শত সম্পাদকীয়র বিস্তৃত পরিসর পূর্ণ হয়ে উঠবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই এবং আপাতত সে-টা প্রতিস্থাপন করা একেবারেই সম্ভব নয়। তাই বলতে হয়, ১৯৭৫-এর পর আজ পর্যন্ত জননিরাপত্তার প্রশ্নে তো কোনও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জননিরাপত্তা না বাড়াতে পারলে ব্যাপকাকারে দেশে সংঘটিত উন্নয়ন তো ব্যর্থতাকেই শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত করে বাস্তব করে তোলবে, সেটা বুঝতে কাউকেই যথেষ্ট বুদ্ধি খরচও করতে হবে বলেও মনে হয় না। সুতরাং কেউ একজন ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ আবৃত্তি করে ফেললে তাঁকে দোষ দেওয়ার কি কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ অবশিষ্ট থাকবে? এমন ভাবনাটা যদি ভুল হয়, তবে মাথাকাটা লাশের মেয়েটি ফিরে এসে যদি কোনও বিচার চাওয়ার তোয়াক্কা না করে বলে, ‘এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না’, তা হলে তার কী হবে?