“দোয়ারাবাজার উপজেলার চিলাই, মৌলা, খাসিয়ামারা, মরাচেলা পাহাড়ি নদীগুলো দীর্ঘদিন ধরে বালুখেকোদের কবলে রয়েছে। এরা শাসন করে খুবলে খুবলে খায়। তন্মধ্যে খাসিয়ামারা, সোনালিচেলা ইজারা দেয়া হলেও মানা হচ্ছে না ইজারার নিয়মনীতি। পাড় কেটে অব্যাহত বালু উত্তোলন এবং নদীর তীর, চর দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় নদী ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে উপজেলার অন্যতম পাহাড়ি নদী চিলাই। ওই নদী জলমহালের জন্য ইজারা দেয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খুবলে খাচ্ছে বালুখেকোরা। এ কারণে নদীর পাড় ভেঙে বসতি বিলীন হচ্ছে এবং নদীর পাড় কাম ফসলরক্ষা বাঁধও ভেঙে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ি ওই নদীর ওপর এমন অত্যাচার হলেও যেন দেখার কেউ নেই।”
এই কথা কটি একটি সংবাদপ্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারে (৫ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত দৈনিক সুনামকণ্ঠে এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়েছে, ‘বালুখেকোদের কবলে চিলাই নদী’। দোয়ারাবাজারে কেবল নয় সুনামগঞ্জেও এরকম হচ্ছে, হচ্ছে সারাদেশেই। কবলে নিয়ে খুবলে খাওয়ার এই অপকর্ম প্রকৃতি থেকে সমাজ, সমাজ থেকে সংস্কৃতি, রাজনীতি-অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে, যাকে বলে, সবখানে বিস্তৃত। সোজা কথায় এর প্রলম্বনÑ চিলাই নদী কিংবা ধোপাজান-চলতি নদী তো কোন ছারÑ দেশের সব নদী, হাওর, বিল, চর, পর্বত, বন, জলাশয়, খাসজসি, সরকারি ভূমিসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাত, দোকানপাট, ব্যবসায়-বাণিজ্য, দপ্তর, প্রতিষ্ঠান, মঞ্চ পর্যন্তÑ কীছু বাদ নেই, সব কীছুতে অর্থাৎ দেশের পরিসীমার সবখানেই যা একটা কীছু হোক, হলেই হলো, কবলে নিয়ে খুবলে খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে, অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। এই যাকে বলে, সারা দেশটাকেই কবলে নিয়ে খুবলে খাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ, যারা সম্পদ আত্মসাৎ ভিন্ন অন্য কোনও কীছু বুঝে না, তাদের সকল কর্মক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় আত্মসাতের লোভসঞ্জাত মনোবিকারের দানবিকতার শক্তির অনুপাতে। সত্যিকার অর্থে এমতাবস্থায় সমাজটা বদলে না গেলে, সমাজের রাজনীতি ও অর্থনীতি জনকল্যাণের সাংস্কৃতিক নিরিখে বদলে না গেলে, রাষ্ট্র শোষণবিরোধী নীতিতে পর্যবসিত না হলে মানবিকতার ঘাড়ে চড়ে দানবিকতার তা-ব চলতেই থাকবে, কীছুতেই বন্ধ হবে না। মনে রাখতে হবে, দেশে মুষ্ঠিমেয় মানুষ ধনী হয়ে উঠে দেশ ধনী দেশের শিরোপা পেয়ে গেলেই জনগণ শান্তি ও সুখে থাকবে তা কিন্তু নয়। সম্পদের সমবণ্টনের নীতি কার্যকর না হলে মানুষ কর্তৃক মানুষের উপর প্রভুত্ব, শাসন, শোষণ ও নির্যাতন যেমন ছিল এবং আছে তেমনিই বহাল থাকবে।