সত্যিকার অর্থে এবংবিধ একক বৈজ্ঞানিক আলোচনার বিষয়টি কেমন যেনো এক বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতির জটিলতায় নিমজ্জিত এই দেশের জন্য কীছুটা হলেও ব্যতিক্রম। বিশেষ কারণে এখানে উচ্চমার্গীয় বৈজ্ঞানিক-সাংস্কৃতিক চর্চার রেওয়াজ বলতে গেলে চম্পট দিয়েছে, অনেক দিন আগে। শহর কিংবা গ্রামান্তরে যতোটা ওয়াজ মাহফিল হয় ততোটা বিজ্ঞানর্চাচায় গতিসঞ্চার করতে পারে এমন অনুষ্ঠান হয় না। বছর দশেক আগে দেশব্যাপী বইপড়ার কার্যক্রম পরিচালনার কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের পাঠক্রম থেকে ‘যে গল্পের শেষ নেই’ বইটি বিশেষ মহলের আপত্তি-চাপের মুখে ছিটকে পড়ে, যদিও আন্তর্জালে দিগম্বরীদের আকাশ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাঁদের আপত্তি উত্থাপিত হতে দেখা যায় না, অর্থাৎ আপত্তির মুখে ছিটকে যায় না। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির প্রযোজনায় এমন জ্ঞানবিস্তারি অনুুষ্ঠান এখন আর তেমন একটা হয় না। অতীতে একদা এই শহরের কাব্যান্দোলনের হোতা পুরোহিত কবি মুতাসিম অলী ও অন্যান্য সংস্কৃতিকর্মীর প্রচেষ্টায় কালেভদ্রে এমনটা হতে দেখা যেতো, যেমন তাঁরা ‘বাংলা সাহিত্যের প্রতিবাদের ধারা’র মতো জাতিসত্তা বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অনুষ্ঠান করতেন। আর এখন এই পাঠাগার থেকে শহর উন্নয়নের বিষয় নির্বাচন করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যে-টাকে বিদগ্ধমহলের কেউ কেউ পাঠাগারের দায়িত্ববহির্ভূত কর্মক্রিয়া বলে অভিহিত করেন, তাঁরা মনে করেন এবংবিধ অর্থাৎ উচ্চমার্গীয় বৈজ্ঞানিক-সাংস্কৃতিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনার অনুষ্ঠান সাধ্যানুসারে প্রতিটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত আয়োজিত হোক। তারপরেও আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারের উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যে তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাই এবং বিশেষ করে গত সোমবার (২ অক্টোবর ২০২৩) ‘লেট আস নো দ্য ইউনিভার্স (চলুন বিশ^ব্রহ্মা-কে জানি)’ শীর্ষক একক আলোচনা পাঠাগারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রশংসা করি। আলোাচক ছিলেন আমাদেরই সুনামগঞ্জের এক সন্তান। এই মেধাবী মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি ১৯৪৭-য়ের দেশভাগের কালান্তক রাজনীতির চক্রান্তে পড়ে। তিনি ভারতের আগরতলা মহারাজা বীরবিক্রম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (রসায়ন) পূর্ণেন্দু কান্তি দাশ। একজন বিজ্ঞান লেখক, বিশটির অধিক বই লিখেছেন। বয়স তাঁর কম নয়। ইতোমধ্যে আশি ছাড়িয়ে বিরাশিতে পা রেখেছেন। এই শহরের প্রগতিশীল নিরঞ্জন দাশের তিনি মামা, বেড়াতে এসেছেন, জন্মভূমির টানে। আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি, তিনি শতায়ু হোন। আর তাঁর বিজ্ঞানবিস্তারি কার্যক্রমের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। সেইসঙ্গে তাঁকে (অধ্যাপক পূর্ণেন্দু কান্তি দাশকে) তাঁর জ্ঞানবিস্তারি আলোচনা উপস্থাপনার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনসহ ধন্যবাদ জানাই।