সম্প্রতি ‘ল্যানসেট কেন সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো?’ এমত প্রশ্ন উত্থাপক একটি প্রতিবেদন গণমাধ্যমান্তরে প্রকাশিত হয়েছে এবং তা যথারীতি সুনামকণ্ঠের সম্পাদকীয় দপ্তরের নজর কেড়েছে। আমরা তেমন কীছু বলতে চাই না। আমরা জানি, তিনি একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানী, উচ্চতার নিরিখে সর্বোচ্চ শিখরস্পর্শী রাজনীতিক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নাতনি। তিনি বিশ্বরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা কিংবা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা। কেবল এইসব কারণে তিনি একজন যোগ্যব্যক্তি, তেমনটা আমরা মনে করি না। তিনি বিশ্বব্যাপী সমাজসাংস্থিতিক বিশাল চলিতকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, যেখানে তাঁর নানা, মা কিংবা বাবার কোনও অবদান নেই, যেখানে নিজের যোগ্যতার চেয়ে বড় কোনও মাপকাঠি কখনওই কার্যকর হয় না। কোনও রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিকসূত্রে উত্তরাধিকারী হলেই কেউ ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা’ কিংবা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য’ হওয়া অথবা ‘চাথাম হাউজের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রামে একজন সহযোগী ফেলো হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ইউনিভার্সাল হেলথ কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন ’-এর আধিকারিক হওয়া সম্ভব নয় কীছুতেই। তার জন্য চাই বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার মানদ-ে বেশ অনেক কটি স্তর উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যক্তিগত সাধনা ও যোগ্যতা। ভুলে যাবেন না, গড়পড়তা সকলেই এভারেস্টজয়ী তেনজিং নুরকে নয়। সায়মা ওয়াজেদও ব্যক্তিগত যোগ্যতার নিরিখে উচ্চতার শীর্ষে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পারেন নিজের যোগ্যতায়, তেমনি অনন্য একজনই। তাঁর মতো খুব কম সংখ্যক মানুষেরই জন্ম হয় পৃথিবীতে।
সায়মা ওয়াজেদ একজন বড়লোকের বখে যাওয়া সন্তান হতে পারতেন, কিন্তু তিনি হয়েছেন বিশে^র শ্রেষ্ঠ গুণী মানুষদের একজন এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত এক মহৎপ্রাণ নারী। এ-জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন গর্ববোধ করেন আমরাও তেমনি গর্ববোধ করি। আমরা ভাবি, তিনি কোনও প্রধানমন্ত্রীর সন্তান না হলেও কোনও ক্ষতি ছিল না, তিনি বাঙালি এক নারী, এটাই যথেষ্ট এবং যোগ্যতায় সকলকে এক অর্থে ছাড়িয়ে গেছেন, এর চেয়ে আর বেশি কীছু চাই না।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যখনই কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসেন তখনই কোন এক অজানা প্রান্ত থেকে আসে বিপত্তি। প্রশ্ন ওঠে- ওই পদে ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে। এটিই এখন একটি সচরাচর চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়া বর্তমানে একটি অন্যতম অবস্থানে আছে। আর নারী নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় সবচেয়ে বেশি এই অঞ্চলেই। তেমনি একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন- বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায় স্থান নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বাংলাদেশের মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে সায়মা ওয়াজেদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তবে তাদের প্রশ্নের যৌক্তিকতা নিয়েও আছে প্রশ্ন।” আমাদের যেটুকু বলার প্রতিবেদনের এই কথাকটির মধ্যে বলা হয়ে গেছে। আমরা শুধু বলতে চাই, নারীব্যক্তিত্বের প্রতি বস্তাপচা পুরুষতান্ত্রিকতার পঙ্গু যুক্তি দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলতার দালালি করা বর্তমান বৈজ্ঞানিক ও প্রাযুক্তিক উন্নয়নের যুগে মূর্খতারই সামিল। দ্য ল্যানসেট এই মূর্খতা প্রদর্শন করে চলেছে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে। বলা হচ্ছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বাংলাদেশের মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে সায়মা ওয়াজেদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে’ এই সংস্থাটিসহ কেউ কেউ। প্রতিবেদনে সংস্থাটির পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়েছে, “দ্য ল্যানসেট একটি সাপ্তাহিক পিয়ার-রিভিউড মেডিকাল জার্নাল যার প্রকাশনা সংস্থার নাম ‘এলসেভিয়ার’। এলসেভিয়ার একটি ডাচ একাডেমিক প্রকাশনা সংস্থা যা সম্প্রতি নিন্দিত হয়েছে তার একটি জার্নালের স¤পূর্ণ স¤পাদকীয় বোর্ডের পদত্যাগের জন্য। ৪০ জনেরও বেশি স্বনামধন্য বিজ্ঞানী প্রকাশনা ক্ষেত্রে ‘জায়ান্ট’ এলসেভিয়ারের ‘লোভ’ এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। এর মধ্যে ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কিংস কলেজ লন্ডন এবং কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা।” সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, এইরূপ প্রতারক একটি প্রতিষ্ঠানের অপপ্রচারে কীছু যায় আসে না। যোগ্যতার প্রশ্নে সায়মা ওয়াজেদের গৌরবটুকুও এতে ক্ষুণœ হবে না। তার মহিমা উদ্ভাসিত হবেই দিকে দিকে, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন। কারণ পৃথিবীর তাঁর মতো মানুষের দরকার আছে। তাঁর মঙ্গল হোক। তিনি দীর্ঘজীবী হোন। তাঁর সাফল্যের মুকুট আরও আরও জয়পালকের স্পর্শে সুশোভিত হোক। বাংলাদেশের জয় ও গৌরব বিশ্বপরিসরে ব্যাপ্ত হোক।