গত শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) স্থানীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “ইতিহাস আশ্রিত অনেক স্থাপনা আমাদের দেশে আজ হুমকির মুখে। যদিও এটা অনেক পুরনো খবর। তবে নতুন খবর হচ্ছে ধ্বংসের মিছিলের লম্বা সারিতে এবার যোগ হচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারের শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো। উপজেলার পাগলাবাজারে মূল কেন্দ্রে অবস্থিত এই বাংলো তার শত বছরের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কালের মহাপরিক্রমায়। ব্রিটিশ শাসনামালে নির্মিত এই বাংলো অব্যবহৃত থাকায় বলতে গেলে পুরোপুরি নষ্ট হয়েই গিয়েছিল। ২০০৪ সালের দিকে তৎকালীন পশ্চিপ পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কুর উদ্যোগে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে পুরনো আদলে পুনঃনির্মাণ করা হয় চৌচালা বিশিষ্ট এই ভবন। ভবনের আশপাশে রয়েছে প্রচুর ফাকা জমি। আনুমানিক ১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই বাংলোর ফাকা জমির সৌন্দর্য বাড়ানোর কথা থাকলেও ক্রমশ ডাস্টবিনে পরিণত হচ্ছে। এখন এই স্থাপনাকে অঘোষিত পাবলিক টয়লেট বললেও ভুল হবে না। অভিভাবকহীন হয়ে থাকায় বাংলোটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।”
উদ্ধৃতিটি একটু বড় হলেও ক্ষতি নেই। যা আমরা সম্পাদকীয়তে বলতে চাই তার সারার্থের উজ্জ্বল ইঙ্গিত এই উদ্ধৃতিতে নিহিত আছে। আমরা জাতি হিসেবে আমাদের জাতিগত আত্মপরিচয় থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছি ক্রমাগত। কোনটা সংরক্ষণ করা উচিত কিংবা কোনটা নয় তার বিবেচনা আমাদের মধ্যে নেই। লাউড় রাজ্যের রাজবাড়ি সংরক্ষণে আমরা এগিয়ে এসেছি যখন, তখন অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। ঐতিহাসিক এই স্থানকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল সেই একাত্তরোত্তরকালের শুরুর দিকেই। অথচ সেই কার্যক্রমটা আমরা শুরু করেছি এই দুয়েকবছর আগে, একাত্তরের স্বাধীনতা লাভের প্রায় অর্ধশতাব্দী অতিক্রমের পর এবং ইতোমধ্যে অনেক ঐতিহাসিক আলামত চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সবচেয়ে অবিমৃষ্যকর ঘটনা হলো এই যে, একটি স্থাপনার প্রতিÑ হোক তা ঐতিহাসিক কিংবা অনৈতিহাসিকÑ এই দেশের সাধারণ মানুষের আচরণগত বর্বরোচিত ও পশ্চাদপদ মনমানসিকতার প্রকাশ। তাঁরা একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার মর্যাদারক্ষার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন নি যখন তাঁরা প্রত্যেকে মুঠোফোন ব্যবহার করছেন। এই সমাজব্যবস্থা মুঠোফোন জনগণের হাতে তোলে দিয়ে তাঁদের পকেট কাটার ব্যবস্থা করেছে বটে কিন্তু তাঁদের জন্য ঘরের বাইরে দৈহিক বর্জ্যমল ত্যাগের নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করে দিতে পারে নি এবং বিপরীতে যেখানে বর্জ্যমল ত্যাগ উচিত নয় সেটাকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে এসে রক্ষা করতেও পারছে না। ভুলে গেলে চলবে না যে, রাস্তাঘাটে বা পরিত্যক্ত কোন ভবনে প্র¯্রাব-পায়খানা করার মানসিকতাসম্পন্ন জনসম্পদ নিয়ে উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখা দিবাস্বপ্নের নামান্তর মাত্র, এর বেশি কীছু হতে পারে না। কারণ যে-কোনও উন্নত দেশে এমনকি শিশুকে পর্যন্ত রাস্তায় পড়ে থাকা কোনও ময়লা নিজ হাতে তোলে নিয়ে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে অর্থাৎ ডাস্টবিনে ফেলতে দেখা যায়। অথচ এখানে বলত গেলে সমগ্র দেশটাই একটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানী শহরটা পর্যন্ত হয়ে গেছে একটি উচ্চমাত্রার দোষণাক্রান্ত শহর, বিজ্ঞানের বিবেচনায় বসবাসের অযোগ্য। রাস্তা-ঘাট ও ভবন ময়লা করার এই জঘন্য প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, কারণ উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে প্রমাণ রেখেছে যে, উন্নত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা একটি প্রধান পূর্বশর্ত। রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি সবকীছু পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, সভ্যতার নিয়ম এটাই।