একটি দৈনিকের সম্পাদকীয় থেকে টুকলিফাই করছি। লেখা হয়েছে, “হরেক নামের চাঁদাবাজি ও এর প্রতিরোধ প্রক্রিয়া এখন যেন চোখ বন্ধ করে কাকের সাবান ঠুকরানোর মতো বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষকরা দাবি করেন, কাক সাবানে ঠুকর দেয়ার সময় চোখ বন্ধ করে রাখে, সে মনে করে তার সাবান চুরি ও ঠুকরানোর দৃশ্য দুনিয়ার আর কেউ অবলোকন করতে পারছে না। এ হলো কাকের বেকুবি। কিন্তু চাঁদাবাজরা এমন বেকুব নয়। তারা বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচিয়ে টগবগিয়ে চাঁদা তোলে। সে প্রকাশ্যে এই কাজ করে, কিন্তু নিজেকে আড়ালে রাখতে পারে সুনিপুণ মুন্সিয়ানায়। অর্থাৎ এই অবৈধ কর্মকা- দেখে যাদের প্রতিবিধান করার বিশাল বড় দায়িত্ব তাদের চোখ বন্ধ করে রাখতে সাংঘাতিক পারঙ্গমতা দেখাতে সক্ষম এইসব চাঁদাবাজরা। তাই এখানে-ওখানে চাঁদাবাজির রমরমা উপস্থিতি ও প্রবল প্রতাপ থাকলেও দিব্যি দায়িত্বশীলরা ‘অভিযোগ পাইনি’, ‘এরকম কিছু শুনিনি’ ধরনের কথা বলে নিজেদের কাকস্য সন্তান রূপে প্রতিভাত করতে সফল হচ্ছেন।”
এই সম্পাদকীয় অভিমতের সঙ্গে আমরা একমত এবং সমর্থনও করছি, কিন্তু প্রথম বাক্যটির (“হরেক নামের চাঁদাবাজি ও এর প্রতিরোধ প্রক্রিয়া এখন যেন চোখ বন্ধ করে কাকের সাবান ঠুকরানোর মতো বিষয়ে পরিণত হয়েছে।”) নিহিতার্থকে মানতে পারছি না। যদি মেনে নেই তবে অনিবার্যভাবে একধরণের স্ববিরোধিতায় আক্রান্ত হই। কারণ “চাঁদাবাজি ও এর প্রতিরোধ প্রক্রিয়া”র বিষয়টি প্রকৃতপ্রস্তাবে “চোখ বন্ধ করে কাকের সাবান ঠুকরানোর মতো” কোনও কীছু অর্থাৎ ‘বেকুবি’ নয়, বরং বুদ্ধির দুর্বুদ্ধিতে পর্যবসিত হওয়ার বাস্তবতা। এই বাস্তবতার নাম দেওয়া হয়েছে কাঠামোগত সহিংসতা। বুদ্ধিকে এমন দুর্বুদ্ধিতে পরিণত করতে পারে কেবল মানুষেরাই। এই ‘মানুষেরা’ সমাজের সকল মানুষ নয়, বরং একটি সমাজের ক্ষুদ্র একাংশ। যাঁরা সম্পদশালী ও সমাজের প্রশাসক এবং তাঁরা বর্তামানে সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের ঐতিহাসিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এটি একটি বাস্তব সত্য অর্থাৎ সমাজসাংস্থিতিক বাস্তবতা, যাকে বলে প্রপঞ্চ।
আমরাও আমাদের সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই “হরেক নামের চাঁদাবাজি ও এর প্রতিরোধ প্রক্রিয়া”র সামগ্রিক বাস্তবতাকে সমালোচনা করি এবং প্রতিটি পত্রিকার মতোই করে আসছি এবং করে আসবো। এটাই আমাদের পক্ষে বর্তমান সামাজসংস্থিতিক পরিসরে স্বাভাবিক ও আমাদের টিকে থাকার প্রশ্নে অনিবার্য। কিন্তু আমরা কেউই বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধার জন্যে আপাতত প্রস্তুত নই। কারণ বিড়ালের ‘মেও’-কে পাকড়াও করে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারও নেই। সংশ্লিষ্ট এই বিষয়ে সমাজবিশ্লেষকদের পরামর্শ এই যে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধার একটাই ইতিকর্তব্য, আর সেটা হলো ব্যক্তিমালিকানার গুরুভার সমাজের কাঁধ থেকে নামানো। আপাতত এর বেশি কীছু বলতে চাই না, আর বললে সেটা স্বদায়িত্বের অতিরিক্ত ও প্রতিষ্ঠিত নীতির বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তারপরেও কথা থাকে যে, কেউ না কেউ এই আচলায়তন ভাঙবেই। প্রতীক্ষায় থাকুন।