পত্রপত্রিকা তথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইদানিং ‘হাওরকন্যা’ বলা হচ্ছে। গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩) একটি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে, “সুনামগঞ্জের ‘হাওরকন্যা’ টাঙ্গুয়ার হাওর”। কে বা কারা যে এই নাম (‘হাওরকন্যা’) দিয়েছেন এবং কেন দিয়েছেন তার কোনও হদিস কারও জানা নেই। তবে আসলে টাঙ্গুয়া অদূর অতীতে যে রূপে বিদ্যমান ছিল সেই রূপে নেই। তখন কিন্তু টাঙ্গুয়ার রূপমাধুর্য্য ছিল পৃথিবীতে সেরা, যথাযথ বিবেচনায় একমেবাদ্বিতীয়ম। তখন তাকে কেউ হাওরসুন্দরী, হাওররাণী, হাওরস¤্রাজ্ঞী অথবা হাওরকন্যা যা-হোক একটা কোনও নামে ডাকলে মানাত, কিন্তু তখন কেউ তাকে এসব সুন্দর নামে ভুলেও ডাকে নি। টাঙ্গুয়া একদা তার কোটি বছরের পুরনো কিন্তু সময়ের প্রতিটি ক্ষণে প্রমত্ত যৌবনের অহংকার নিয়ে প্রতিদিন নতুন রূপে মানুষের কাছে হাজির হতো। হাওররের মাতৃরূপের সে-সৌন্দর্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। টাঙ্গুয়া এখন আর নিজেকে অপরূপ সে-রূপে হাজির করার সামর্থ্য রাখেনা। বর্তমানে সে তার অঙ্গের সকল অলঙ্কার খুইয়ে প্রকৃতপ্রস্তাবে একটি হাওরের কঙ্কালে পরিণত হয়েছে, আর হৃতগৌরবে ¤্রয়িমান ও হতশ্রী টাঙ্গুয়াকে এখন লোকেরা বলছেন ‘হাওরকন্যা’।
বিদগ্ধজন মনে করেন, ‘হাওরকন্যা’ শব্দটির সঙ্গে সৌন্দর্য ও গুণের একটি সমাবেশ থাকা চাই, মাতৃরূপের একটি ¯িœগ্ধতা থাকা চাই। এখন আর টাঙ্গুয়ার নাম ‘হাওরকন্যা’ হতে পারে না, কেন যেনো বেমানান ঠেকে, মনে হয় হতশ্রী বীতযৌবনা টাঙ্গুয়াকে উপহাস করা হচ্ছে। আসলে এখন ‘হাওরকন্যা’ বলে তার রূপের তারিফ করে বলা হচ্ছে, ‘মুখপুরি তুই মর’। এক শ্রেণির বাঙালি এমনটিই করছেন।
অতীতে একদিন টাঙ্গুয়া, যাকে বলে, সত্যি সত্যি ‘কন্যা’ই ছিল, অতুলনীয় সুন্দরী ছিল সে, তার রূপবর্ণনার উপযুক্ত ভাষা ছিল না বাংলাভাষার ভা-ারে। রূপের রাণীর রূপসৌন্দর্য যখন উধাও হয়ে গেছে। আর সেই বীত যৌবনা ও হতশ্রী কন্যার রূপের মধুরী পান করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। তাঁদেরকে জানিয়ে দেওয়া ভালো যে, তাঁরা টাঙ্গুয়ার ইতিহাস পাঠে নিমগ্ন হোন। তাঁরা দয়া করে জানুন, টাঙ্গুয়া মানুষের অত্যাচারে কী কী সম্পদ হারিয়েছে। আধুনিক প্রকৃতিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে টাঙ্গুয়ার রূপযৌন্দর্য না বাড়িয়ে টাঙ্গুয়ার চুল-নাক-কান কেটে তার মুখে প্রকৃতি দূষণের চুনকালি মাখিয়ে শাকচুন্নি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেই শাকচুন্নিকে এখন বলা হচ্ছে ‘হাওরকন্যা’। তারিফের কী বাহার! একই বলে, পরিতাপের বিষয় বটে।