যেকোনও ব্রিজের নির্দিষ্ট পরিমাণ ভারবহনের একটি ক্ষমতা থাকে। এই নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ওজন ব্রিজটির উপরে তোলে দিলে তা ভেঙে পড়তে পারে এবং সাধারণত তাই হয়। এই কারণে অর্থাৎ ব্রিজের ভারবহনের ক্ষমতার অতিরিক্ত ভারের চাপ সহ্য করতে না পেরে গত মঙ্গলবার (২২ আগস্ট ২০২৩) বিকেলে জগন্নাথপুর রানীগঞ্জ সড়কের নলজুড় নদীর কাটাগাঙ্গের বেইলি ব্রিজে ট্রাক ওঠতেই পাটাতন খোলে ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে। পত্রিকায় বাক্যের শেষে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন বসিয়ে শিরোনাম করা হয়েছে, “‘জগন্নাথপুরে বেইলি ব্রিজ ভাঙন : সওজের মামলায় নিহত ট্রাকচালকও আসামি !” নিয়মনীতি মানলে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। যান চলাচলের একটা নীতি আছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রমাণিত সত্য এই যে, ট্রাকচালক যানচলাচলের নীতি মানেন নি। মানলে এমন ঘটনা ঘটার কথা ছিল না। সংবাদপ্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে ট্রাকটি ওঠার পর বেইলি ব্রিজটির পাটাতন খুলে পড়ে যায়। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড লাগানো ছিল।” অর্থাৎ প্রজ্ঞাপনে জানিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মানা হয় নি এবং যা হবার তাই হয়েছে। নিয়ম না মেনে অনিয়মকেই নিয়ম করে নেওয়ার অনিবার্য পরিণামের পরিপ্রেক্ষিতে নিহতরা প্রকৃতপ্রস্তাবে আত্মহত্যা করেছেন এবং সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে এর বেশি কীছু বলার অবকাশ আপাতত নেই। অভিজ্ঞমহলের ধারণা দেশে সর্বত্র সব সব বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি অপ্রতিহত গতিতে চলছে। সেটা পথে হোক কিংবা মাঠে। অথবা হতে পারে নদীতে, নদীর চরে, জঙ্গলে, হাওরে-বাঁওরে। মাটিতে কিংবা আকাশে। সবখানে। মানবকল্যাণে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যেমন তেমনি সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির রাজত্ব চলছে। রাজনীতি-অর্থনীতির ক্ষেত্রে সেটা বেশি বেশি করে প্রকটিত, এই সত্য কারও পক্ষেই অস্বীকার করার উপায় নেই। আসল কথা হলো একটি দেশে, একটি রাষ্ট্রের ভেতরে ভালো কিংবা মন্দ যা-ই হোক একটা আইন অথবা একটা নীতি থাকে, নাগরিককে সেটা মানতে হয়। সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর হলে সেটা নিয়মমাফিক বদলে দিতে হয়। এটাই নিয়ম। রাস্তায় যান চালনারও একটা নিয়ম আছে। প্রাগ্রসর প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই নিয়মটি মানার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দুর্ঘটনা ঘটবেই।