“একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-িত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করার কারণে, গুজবের বিরুদ্ধে কথা বলায় সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন, গণজাগরণমঞ্চের কর্মী, প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের লোকজনসহ মুক্তচিন্তকদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে হামলার ক্ষেত্রও তৈরি করার চেষ্টা করছে। অনেককে অনলাইনে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন। এছাড়াও এই ইস্যুতে ধর্ম অবমাননার গুজব সৃষ্টি করে হামলার আশঙ্কা করছেন অনেকে।” গত বৃহ¯পতিবার (১৭ আগস্ট ২০২৩) পত্রিকায় এরকম সংবাদ প্রকাতি হয়েছে।
বাংলাদেশে এমন হতেই পারে। কারণ বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যে-দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে ইতোমধ্যে বলতে গেলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে গেছে, অথচ এখানে ধর্মান্ধতার অন্ধকার তিরোহিত হয় নি এবং প্রকারান্তরে মানুষ এখানে আধুনিক চিন্তা-চেতনায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেন নি বিধায় সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়েই আছেন। আর এর কারণ হলো এখনও এখানে বিজ্ঞানমুখি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা যায় নি। কোনও সমাজে বিজ্ঞানমুখি শিক্ষার বিস্তার করা না গেলে সেখানে অজ্ঞানতার অন্ধকার কীছুতেই বিদূরিত হয় না।
“ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল/ ছয় মাসের পথ মর্দ ছয় দ-ে গেল।” পুঁথির এই উক্তিকে মেনে নিতে তাঁরা মোটেও কসুর করেন না। কিংবা কোনও ব্যক্তিকে তাঁরা চাঁদে কিংবা মক্কা শরিফে প্রত্যক্ষ করে ফেলেন। অথবা কোনও প্রাকৃতিক ঘটনাকে কোনও ব্যক্তি বিশেষের অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশরূপে পরিলক্ষিত করেন। এবং এইরূপ অজ্ঞানতাকে পুঁজি করে কায়েমি স্বার্থবাদীরা নিজেদের স্বার্থোদ্ধোর করে। ইতিহাসে তার অনেক অনেক উদাহরণ আছে। ভুলে গেলে চলবে না, একদা পাকিস্তান আমলে ধর্মের নামে নির্মম শোষণ-নিপীড়ন চালানো হয়েছিল এই দেশের মানুষের উপর। এইরূপ কর্মকা-ের মর্মে ধর্ম নয় বরং ধর্মকে জাগতিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রবণতাটিই প্রাধান্য পায়।
ইতিহাস বলছে, পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ববাংলাকে শোষণ করার স্বার্থেই ধর্মকে ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের শাসকরা, প্রকারান্তরে পূর্বপাকিস্তানকে একটি উপনিবেশে রূপান্তরিত করেছিল তারা। বর্তমানের বাংলাদেশেও জাগতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করতে যাঁরা কসুর করেন না, তারাই একজন আইনের প্রয়োগানুসারে দ-িত মানুষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন এবং সাধারণ মানুষকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে সমাজকে অস্থির করে তোলতে চাইছেন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির প্রবণতাকে ইসলাম সমর্থন করে না কিংবা ফ্যাসাদ (ঝঞ্ঝাট, ঝামেলা, বিপত্তি, মুশকিল, কলহ, ঝগড়াঝাঁটি) ও ফিতনার (নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়) সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়াকেও অবশ্যই নয়। ইসলাম অনন্ত শান্তির ধর্ম। এই পবিত্র ধর্মকে অপবিত্র করবেন না।