গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই ২০২৩) এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, ‘কম্পিউটার বিষয়ে দুই দিকে জ্ঞান অর্জন করা যায়। একটি হলো নিজের জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে নিতে ভাল দিক নিয়ে কাজ করা, অপরটি হলো নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে অশ্লীল পন্থায় এগিয়ে নেয়া। যারা দক্ষভাবে কম্পিউটার বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন, তারা অবশ্যই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান নিজের জীবনমানের উন্নয়নে কাজে লাগাবেন।’
বিদগ্ধ বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটার প্রযুক্তির সম্পর্কে অনেক কীছুই বলেন, তার বিস্তারিত জানি না। কিন্তু এটা জানি যে, জীবিকার্জনের পরিসরে কম্পিউটারের প্রয়োগ যেমন বেড়েছে তেমনি এর অপপ্রয়োগও থেমে নেই, যদিও অবশ্যই সেটা কারও কাম্য নয় বা হতে পারে না। অন্যদিকে মানুষের যৌনতাপছন্দ জীবনে কম্পিউটারের অশ্লীলতানির্ভর ব্যবহার তো একেবারেই কাম্য নয়Ñ এটিকে অবশ্যই কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। আকাশসংস্কৃতির বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জালের ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত অশ্লীলতাকে প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় ধরে নিয়েই সাধারণ মানুষের চেতনায় প্রতিরোধের দেয়াল তোলতে হবে, মানসসাংস্কৃতিক উচ্চতায় উত্তীর্ণ হয়ে। আপাতত এর কোনও বিকল্প নেই। মানুষকে তার চেতনাচন্দ্রের জ্যোৎ¯œায় ¯œাত করে শ্লীলতার সংজ্ঞা শেখাতে না পারলে আমাদের প্রিয় সাংসদের আশঙ্কাপ্রকাশক ভয়ঙ্কর ভাষ্য ও তার অন্তর্নিহিত সত্যÑ ‘নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে অশ্লীল পন্থায় এগিয়ে নেয়া’Ñ থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা কাউকেই রক্ষা করা যাবে না, চোরাপথে হলেও তার বিস্তার ঘটবেই এবং বাড়বেই।
আমাদের বিদ্যুতায়িত সমাজপরিসরে ইতোমধ্যেই কম্পিউটারের ব্যবহার ব্যাপকতা বেড়েছে ব্যাপকাকারে এবং আমরা জাতিগতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সেটাকে দক্ষতার সঙ্গে সামল দিতে পারছি নাÑ ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি হ্যাকারকর্তৃক কম্পিউটার কৌশল ব্যবহার করে ব্যাংক ডাকাতিসহ অন্যান্য অপকর্ম সংঘটনের বেশকটি ঘটনা ঘটেছে এবং অশ্লীলতার আন্তর্জালিক বিস্তার তো নিত্যনৈমিত্তিকতায় পর্যবসিত হয়েছে। এবংবিধ ঘটনার বাস্তবতা কম্পিউটারে অদক্ষতাসঞ্জাত দুর্বলতাকে প্রতিপন্ন করছে। আমাদের তাই জাতীয় পর্যায় থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়াতে হবে এবং সেই সঙ্গে কম্পিউটারের অপব্যবহার প্রতিরোধে জাতিকে প্রস্তুত, অর্থাৎ শিক্ষিত-সাংস্কৃতিক করে তোলতে হবেÑ সাংস্কৃতিক হতে না পারলে অশ্লীলতাকে কীছুতেই প্রতিরোধ করা যাবে না, যেমন মাদকের বিস্তারকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না, মাদক ক্ষতিকর জেনেও লোকেরা তা গ্রহণ করছে। এর মূল কারণ সাংস্কৃতিক দিক থেকে মানুষ হিসেবে মানুষের মানবিক বিকাশ অপূর্ণ থেকে গেছে, পুঁজিবাদ মানুষের এই অপূর্ণতার সুযোগ নিচ্ছে। গত কয়েক বছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রমাণ করছে, মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের প্রতি আমরা মোটেও যতœপর নই।
দেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির অনৈতিক ব্যবহার প্রবলাকারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সকলেই যেমন জানেন, তেমনি জানেন আমাদের প্রিয় সংসদ সদস্য পীর মিসবাহ। বোধ করি সে-কারণেই তিনি কম্পিউটারের অশ্লীলপ্রয়োগের বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি মনে করেন, কম্পিউটারের অনৈতিক-অশ্লীল ব্যবহার মানুষের নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমরা তাঁর কথা থেকে এই অনুসিদ্ধান্ত টানছি যে, কম্পিউটারের অনৈতিক-অশ্লীল ব্যবহার মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকেই কেবল ধ্বংস করে না, এই ব্যক্তিগত অনিষ্টতাই সমাজ জীবনের বৃহত্তর বলয়ে ছড়িয়ে পড়ে জাতিগত অনিষ্টতার নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। কম্পিউটারের ব্যবহারব্যাপকতাকে তাই জাতিগত উন্নয়নের কাজে লাগাতে এই প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ করতেই হবে এবং উচ্চপর্যায়ে কম্পিউটার প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষিত দক্ষ ও মেধাবী মানুষের হাতে। অন্যথায় জাতিগত ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আন্তর্জালিক কেরদারিশমা কিংবা করণকৌশলের বদৌলতে বিশ্ববাসীর কাছে ফাঁস হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটতেই থাকেব, যেমন ইতোমধ্যে ঘটেছেÑ লক্ষ লক্ষ নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোপনীয় তথ্য উন্মোক্ত হয়ে পড়েছে।