অতিসম্প্রতি একজন রাজনীতিক বলেছেন দক্ষতা হচ্ছে যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করতে পারা, অর্থাৎ জ্ঞান প্রয়োগে সক্ষমতা, এই দক্ষতা মানুষের আয় বাড়ায়, দেশ এগিয়ে যায়। বিদগ্ধমহলের ধারণা এটি খুব খাঁটি কথা, এর চেয়ে খাঁটি কোনও কথা হতে পারে না। কিন্তু এই খাঁটি কথাটি ফাঁকা বুলিতে পর্যবসিত হয় যখন একটি দেশের শিক্ষার অভিমুখিনতাকে কারিগরি দিক হতে ফিরিয়ে দিয়ে কেবল জ্ঞানচর্চাভিমুখি করে তোলা হয়। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্তÑ অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এসেওÑ কারিগরি শিক্ষাবিমুখ একটি দেশ। এখানে শিক্ষাসমাপ্তির পর যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করার দক্ষতা অর্জিত হয় না, যেহেতু শিক্ষাকে কারিগরিবিমুখ করে রাখা হয়েছে শুরু থেকেই। কুদরত-এ-খোদা শিক্ষাকমিশনের প্রগতিশীল পরামর্শ এখানে বরাবরের মতো উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে এমন নীতি কোনও দিনই গ্রহণ করা হয় নি। শিক্ষার কারিগরি অভিমুখিনতা ও সমাজ পরিসরে কর্মসংস্থান একটি অন্যটির পরিপূরক। কারিগরি শিক্ষা না থাকলে কলকারখানা করে কোনও লাভ নেই, কলকারখানার অনুপস্থিতিতে কারিগরি শিক্ষাও একেবারেই বেকার। সর্বজনবিদিত এই সত্যকে উপলব্ধিতে নিতে পারলেও সমাজসংস্থিতিটাকে সে উপলব্ধি অনুসারে উন্নীত করার পথে পরিচালনা করতে দেশপরিচালক কোনও রাজনীতিক সংস্থা কখনওই অগ্রসর হতে পারে নি। বরং রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে মেধাপাচারের প্রবণতা প্রতিরোধ করতে না পারার পরিস্থিতির বিপর্যয়ে পড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। কিন্তু এর বিপরীতে দেশের ভেতরে মেধাকে কাজে লাগানোর আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ থেকে পিছিয়ে থাকতেই সমাজনিয়ন্ত্রকেরা পছন্দ করেন এবং বিদেশে সম্পদপাচারে ব্যস্ত থাকেন, যে-সম্পদ দিয়ে দেশের ভেতরে কলকারখানা হতে পারতোÑ কর্মসংস্থান করা যেতে পারতো, বেকারত্ব দূর হতো। অথচ এসব কীছুই হচ্ছে না, দেশনিয়ন্ত্রক রাজনীতি এসব দূরীকরণের দিকে মন দিচ্ছে না। সুতরাং বেকারত্বের অভিশাপ সিংহভাগ শিক্ষিতজনকে অনিবার্য হতাশা জীবনের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত করছে, এবং অন্যদিকে মেধাপচার কিংবা মেধার বিদেশযাত্রা হয়ে উঠছে অনিবার্য ও অপ্রতিরোধ্য। এমতাবস্থায় অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, সর্বাগ্রে দেশকে কারিগরি শিক্ষাভিমুখি করে তোলে যুগোপযোগী শিল্পকারখানা গড়ে তোলতে সচেষ্ট হতে হবে।