দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে মাদকব্যবসার বিস্তারও আনুপাতিক হারে ব্যাপকতা লাভ করেছে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মাদকের বিস্তার দেশের সামাজিক অবস্থাকে যৎপরোনাস্তি বিপর্যস্ত ও দুর্গত করে তোলেছে। গত ক’দিন আগে শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের সাতপাড়া বাজারে দখলবাজ-চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে প্রতিপক্ষ সাধারণ জনতার সংঘর্ষের জেরে দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সরেজমিন প্রতিবেদন করতে দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রতিবেদক সাতপাড়া সফর করে এসে কয়েক কিস্তি প্রতিবেদন করেছেন। তিনি এক কিস্তির প্রতিবেদনে সাতপাড়ায় মাদকব্যবসার বিবরণ তোলে ধরে বলেছেন, এই সাতপাড়া চারদিকের প্রত্যন্ত এলাকায় মাদকদ্রব্য সরবরাহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনটি প্রকারান্তরে প্রতিপন্ন করে যে, সমগ্র দেশ বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলায় মাদকব্যবসায় প্রচ্ছন্নতার অন্তরালে ব্যাপকাকারে বিস্তৃত ও প্রচ- দাপটের সঙ্গে সচল। এমতাবস্থায় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ জেলার একটি উপজেলাকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত বুধবার (১২ জুলাই ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘৩ মাসের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে চাই : পুলিশ সুপার’। আমরা পুলিশ সুপারকে তাঁর জনহিতকর ঘোষণার জন্য অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি তিনি সফলকাম হয়ে জনচিত্তে চিরদিনের জন্য সম্মানের আসন লাভ করবেন। যদিও জানা কথা, তাঁকে সফলতার মুখ দেখতে হলে সমাজের কোনও কোনও দুর্বৃত্ত জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আন্তর্ঘাতক, হিং¯্র সমাজবিরোধীদেরকে একে একে মোকাবেলা করে যেতে হবে।
একটি উপজেলাকে মাদকমুক্ত করার অভিযানে নেমে সফলতার দ্বারপ্রান্তে অগ্রসর হতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়, সমাজে মুক্তবাজার অর্থনীতিকে জিইয়ে রেখে কোনও স্থানকে মাদকমুক্ত করা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। অমাদের পুলিশ সুপারকে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে কথার বহর বাড়াতে চাই না। না পারতে তবু বলি, এইসব অভিযান সচরাচর না হলেও মাঝেমাঝেই প্রায়শই উপরের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত মাঝপথে স্থগিত হয়ে যায়। একদা সুনামগঞ্জে মাদকবিরোধী এক আলোচনা সভায় একজন পুলিশ সুপার পুলিশের মাদক অভিয়ানে নেমে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করতে করতে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের অব্যবহিত পূর্বে উপরমহল থেকে ‘ব্যাক টু দা প্যাভেলিয়ন’-এর নির্দেশ প্রদানের কাহিনী শুনিয়েছিলেন। তখন তাঁর সঙ্গে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন তৎকালে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী খান ও পৌরসভার চেয়ারম্যান মমিনুল মউজদীন। এ ব্যাপারে দুর্মুখেরা যে কারণ ব্যাখ্যা করেন, তার সারসংক্ষেপ হলো, অর্থনীতিতে পুঁজির প্রভুত্বের সামাজিক-রাজনীতিক পরিসরে মাফিয়ারা প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণের হাত সব সময়েই সচল রাখতে সক্ষম হয়ে থাকে। সে-ব্যাপারে বিস্তৃত করে বলার একখনে কোনও আবকাশ নেই, যদিও বিষয়টি একবারেই উপেক্ষা করার মতো কীছু নয়। পরিশেষে বলি, আমরা পুলিশ সুপারের এই মহৎ উদ্যোগকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। এই উদ্যোগের সঙ্গে আছি এবং থাকবো।