দৈনিক সুনামকণ্ঠে (১১ জুলাই ২০২৩) ঘটনার সংবাদশিরোনাম করা হয়েছে, ‘একটি কাঁঠাল নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত’। ক্ষণ-অকুস্থল নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘সোমবার সাড়ে দশটার দিকে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ই্উনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।’ কাঁঠাল নিমিত্ত মাত্র আসলে এর পেছনের কারণ হলো দীর্ঘকালব্যাপী বিরাজিত গ্রামের দুই গোত্র বা গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারের অপরিণামদর্শী মানসিকতা। চলমান এই দ্বন্দ্বের জের ধরেই পরিণতিতে ৩ জনের অর্থহীন প্রাণহানি। এমন প্রাণহানির ঘটনা গত ক’দিন আগেও শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের সাতপাড়া বাজারে সংঘটিত একটি সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে এমন ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটেই চলেছে, গণমাধ্যমে তার খরব প্রায়ই পাঠ করা যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রাণান্ত চেষ্টা করেও সংঘর্ষগুলোকে ঠেকাতে পারছে না। তাছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়ছে যে, সংঘর্ষগুলোর সঙ্গে জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের ঘাফিলতিসঞ্জাত কারণের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ উঠছে।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা আমাদের দেশটা বিভিন্ন দল, উপদল, গোত্র, উপগোত্র, চক্র, উপচক্র ইত্যাদিতে বিভক্ত এবং তাঁরা পারস্পরিক সহিংসু বিবাদে লিপ্ত আছে। প্রতিটি সামাজিকি, রাজনীতিক কিংবা অর্থনীতিক ক্ষেত্রে এই বিভাজন বিদ্যমান। এমনকি দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরোধ দিনে দিনে বেড়ে গিয়ে দেশের রাজনীতিক পরিসরে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। অথচ সাধারণভাবে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনীতিক দলের সমন্বয়েই গণতন্ত্রের ফুল প্রস্ফোটিত হয়।
আমরা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিপক্ষে নই। আইন আইনের পথে চলবে। তারপরেও সাধ্রাণ মানুষ আশা করছেন, অচিরেই হাসনাবাদের গোষ্ঠীবিরোধের অবসান হবে এবং জনপদে শান্তি ফিরে আসবে। জনগণ দেশের বিস্তৃত ক্ষেত্রে বিরাজিত এইরূপ সকল অশুভ বিরোধের অবসান প্রত্যাশী।
সমাজনিয়ন্ত্রক রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গ্রামীণ মাতব্বর ও জনসাধারণ সকলের প্রতি এইরূপ বিরোধ চিরতরে নিষ্পত্তি করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসার আহ্বান রইল। এই বিষয়টি সকলকেই বিবেচনায় নিতে হবে যে, বিরোধে জড়িয়ে প্রাণহানি ঘটানো নিতান্তই অর্থহীন ও এর কোনও সার্থকতা নেই।