শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের সাতপাড়া বাজারে অবৈধভাবে জোর করে চাঁদা তোলছে একটি চক্র। পুলিশকে যথারীতি অবগত করার পরও কোনও প্রতিকার হচ্ছে না। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজচক্রের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পর্যন্ত পারছে না। গত ক’দিন আগে এই গ্রুপটি প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যে রক্তপাতের ঘটনা ঘটায় তাতে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নিহত হয়েছেন, তিনি সংঘর্ষ ফিরাতে গিয়েছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের হত্যা প্রতিক্রিয়াকে বিপক্ষের ঘাড়ে চাপানোর কৌশল হিসেবে এই গ্রুপটি নিজেদের পক্ষের একজনকে হত্যা করে, যে ওই দিন সাতপাড়া বাজারে সংঘটিত সংঘর্ষে উপস্থিত ছিল না।
গত সোমবার (১০ জুলাই ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, শাল্লা থেকে ফিরে, যে প্রতিবেদন করেছেন তার শিরোনাম ছিল : “সাতপাড়ায় আতঙ্ক-২ \ প্রতিদিন জোর করে চাঁদা তোলে নিক্সন গ্রুপ।”
বাংলাদেশে ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্র-ক্ষেত্রের পরিসরে এইরূপ চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অবৈধ উত্তোলন নতুন কোনও ঘটনা নয়। গণমাধ্যমে তার দেদার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রতিনিয়ত, বিষয়টি সর্বজনবিদিত। রাজনীতিক ও প্রশাসনিক মহলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এবং দেশের বাজারব্যবস্থার সর্বত্র এইসব অবৈধ উপায়ে অর্থআদায়-উপার্জনের কারবার, বিভিন্ন প্রকার প্রকরণে, দেদার চলছে। বিভিন্ন পক্ষে বিভক্ত সমাজের কোনও পক্ষই এই প্রবণতাকে প্রশমিত করতে পারে না। আসলে পারছেন না মানে, অপরাধ দমন করার তাঁদের ক্ষমতা নেই, এমন নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র। এই প্রবণতা আজকের নয়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহারের চর্চা হয়ে আসছে এবং প্রকারন্তরে রাজনীতিকে ক্ষমতা অব্যবহারের প্রকৃষ্ট হাতিয়ারে পর্যবসিত করেছে। যদি তাই না হবে, অর্থাৎ তা না হলে সংসদে বসে কী করে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না’র বিধান অনুমোদন করা সম্ভব হতে পারে? এমন অনৈতিক ও অন্যায় কর্ম যদি সংসদে বসে করা যায় তবে সাতপাড়ায় অবস্থান করে অবৈধ উপায়ে চাঁদা তোলা যাবে না কেন? সংসদ থেকে সাতপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিধান তৈরি ও চাঁদা তোলার বিষয়টি মিলেমিশে যতোটা জটিল তার চেয়েও বেশি জটিল সেটাকে সহজ করে উপস্থাপন করা।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না’র সংসদীয় সন্ত্রাসের থেকে শুরু করে সাতপাড়া বাজারে একটি সন্ত্রাসী চক্রের জোরপূর্বক চাঁদা তোলার জবরদস্তিমূলক বিষয়ের জটিল সম্পর্ক এখানে ব্যাখ্যা করার কোনও অবকাশ নেই। আপাতত আমরা কেবল বলছি, অনতিবিলম্বে সাতপাড়া বাজারে চাঁদা তোলার বিষয়টির নিরসন করা হোক, প্রশাসনের সক্রিয় প্রচেষ্টায় এবং সেইসঙ্গে সেখানে সংঘটিত খুনসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের আইনসম্মত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। শাল্লার ভুক্তভোগী মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা এই দাবি জানাচ্ছি।