বেশ কদিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা দুষ্কর হয়ে উঠেছিল সুনামগঞ্জে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থেকেছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের আকাশে দিনভর সূর্য তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে।
বর্ষা মওসুমে সুনামগঞ্জে ক্ষণে ক্ষণে মুষল ধারে অথবা হালকা চালে বৃষ্টি হবেই, খুব একটা ‘ছিদ্রি’ (লোকনিরুক্তি অনুসারে বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়া) দিবে না। ছাতা ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোবে না কেউ। ‘ওগো তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে’ ঘনঘোর বরষার কালে বঙ্গদেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথের এই আহ্বান সুনামগঞ্জের লোকসমাজে কার্যকারিতা পেয়ে গেছে, বলতে গেলে পুরোপুরি।
খবর পাওয়া গেছে, ইতোমধ্যে বেশ কটি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি দুর্গত করে তোলেছে। পরিস্থিতি এমন যে, গতবারের মতো ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অতি সতর্ক লোকেরা তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। আমরা আশা করছি বা বলা যায় কামনা করছি, গতবারের মতো ভয়াবহ বন্যার প্রাদুর্ভাব হবে না। প্রায় সকলেই এমন আশাই করছেন। কিন্তু তাই বলে আমরা কাউকেই সতর্ক থাকতে নিরুৎসাহিত করছি না। বাংলাদেশের বিচিত্র আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি যে কোনও সময় পাল্টে গিয়ে বিশেষ করে সুনামগঞ্জের জন্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া উজানের দেশ ভারতে বৃষ্টিপাতসঞ্জাত ঢলের জলে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা তো আবহমান কাল থেকে ভাটির দেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
যখন (৪ জুলাই, দুপুর ১১টা বেজে ৩০ মিনিট) এই সম্পাদকীয় লিখছি তখন, বাইরে তাকিয়ে দেখি, আকাশে সূর্য তার মুখ দেখিয়ে দিয়েছে এবং মানুষকে অভয় দিচ্ছে। আমরা এই অভয়ের ভরসায় আছি। যদিও এই অভয় যে কোনও মুহূর্তে ভয় হয়ে যেতে পারে, ভুলে গেলে চলবে না।