ছাতকে অবৈধভাবে টিলা কেটে পাথর উত্তোলনের অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকার জরিমানা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন ২০২৩) দুপুরে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা টিলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের এইরূপ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক কার্যক্রমকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করি ও এর জন্য আদালতকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা এইরূপ জরিমানা পর্যন্ত শাস্তির আওতাকে সীমিত না রেখে শাস্তির আকার-প্রকারকে ন্যায়সঙ্গত বৈচারিক উপায়ে আরও অধিকতর বর্ধিত ও কঠোর করা সঙ্গত বলে বিবেচনা করছি। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন বা সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনকে সংস্কার করে যুগোপযোগী করা যেতে পারে। কারণ তা না হলে ক্রমাগত বর্ধিত হারে পাহাড় কাটা কিংবা খাল-বিল, নদী-নালা, বন-জঙ্গল, মাঠ-ময়দান ইত্যাদি পতিত জমি দখল করার মতো প্রাণপ্রকৃতিবিনাশী কার্যক্রম কীছুতেই বন্ধ করা যাবে না। প্রাণপ্রকৃতি রক্ষার সামগ্রিকতার বিষয়টাকে আরও একটু গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সেটাকে অনায়াসে হাওরের যেখানে সেখানে প্রকৃতির বৈচিত্র্যবিরোধী প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত করার এখন সময় এসেছে। কিংবা বিবেচনা করুন, বন্ধ করা যাচ্ছে না বিল শুকিয়ে মাছ ধরার প্রবণতাকে। যে প্রবণতার প্রতিক্রিয়ায় মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণপ্রকৃতির প্রজাতি নির্মূলকরণের প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। এইসব মনুষ্যকৃত কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে না পারলে মানব প্রজাতির টিকে থাকার সমস্যাটি বহুবিধ বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হবে নয়, বরং হাজির হয়ে পড়েছে। একটু ভাবুন।
ইতোমধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রবল ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতের সঙ্গে জনপদ ডুবানো প্লাবন দিনে দিনে প্রবল হয়ে আঘাত হানছে, এমনকি ঘরবাড়ি বিধ্বংসী প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বাড়ছে। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত নি¤œভূমির সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া, বড় বড় ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমে বেড়েই চলেছে, চলবে। এইভাবে ক্রমাগত আরও জটিল, আরও কঠিন হয়ে উঠবে মানুষের পক্ষে এই পৃথিবীতে বসবাস করা। এই ধরুন, প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবণতার বিরোধী অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়া হচ্ছে হাওরে। তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জলাশয়গুলো একটি থেকে অন্যটিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রকারান্তরে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ রুদ্ধ হয়ে গিয়ে মাছের চলাচালের পথ রুদ্ধ হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত মাছের প্রজনন সমস্যা তৈরি করে মাছের প্রজাতি বিলুপ্তিকে অনিবার্য করে তোলছে। এতে করে মাছের ভা-ার হাওরে মাছের আকাল দেখা দিয়ে মানুষের পুষ্টির অভাবকে বাড়িয়ে তোলে স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি করে। এইভাবে প্রকৃতি ধ্বংসের পরিণামে মানুষ আসলে মানবপ্রজাতিকেই বিলুপ্তিকরণের পথে এগিয়ে চলেছে। তাই বলছি আইনি প্রকরণে পাহাড় কাটার শাস্তিটিকে জরিমানার বৃত্তে আবদ্ধ এবং কেবল পাহাড় কাটার মতো বিষয়ের পরিসরে নিবদ্ধ না রেখে সমস্ত রকম প্রকৃতিবিরোধী মানবকৃত কার্যক্রম প্রতিরোধের কার্যক্রমটিকে সার্বিক অর্থে সমগ্র মানবপ্রজাতিকে রক্ষার অঙ্গীকারে পরিণত করতে হবে। প্রকৃতির উপর প্রতিটি আঘাতকে প্রতিহত করতে না পারলে মানবপ্রজাতিকে বাঁচানো যাবে না। আইনি প্রকরণকে সে অনুপাতেই আধুনিক, কার্যকর ও অব্যর্থ হতে হবে।