গত মঙ্গলবারে (২০ জুন ২০২৩) প্রথম আলো’র একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ‘অনুমতি ছাড়া’ চায়ের দোকানে বসায় সাংবাদিক পেটালেন ছাত্রলীগ নেতারা”। ১ জনকে পেটানোর ‘বীরোচিত প্রকরণের সঙ্গে’ ১০ থেকে ১২ জন সংশ্লিষ্ট ছিলেন। যাঁরা সকলেই বোধকরি ‘সিএফসি’ (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার)-এর সম্মানিত সদস্য, যে-‘সিএফসি’কে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ‘উপপক্ষ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘অনুমতি ছাড়া’ চেয়ারে বসা পেটানোর কারণ হলে, বলতেই হয়, এই ‘সিএফসি’ প্রজন্মের মানবসন্তানরা ‘বন্ধু পছন্দের’ নতুন ‘নৈতিকতা’ জাতির সম্মুখে হাজির করছেন। প্রতিবেদনের বিস্তারিত বিবরণীতে ‘প্রতিক্রিয়া’ স্বরূপ বিভিন্নজনের ‘সুন্দর সুন্দর’ মন্তব্য ছাপা হয়েছে, তাঁরা বলেছেন : ‘এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য … কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানাবেন’, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি … অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে … ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
এই সব মন্তব্য ‘নেতাদের’ প্রবল প্রভুত্বের প্রতিকারকল্পে কোনও পথনির্দেশ করতে পারেনি, বরং বিপরীতে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, আনুমতি ছাড়া চায়ের দোকানের চেয়ারে বসলে অলিখিত ‘পেটানোর আইন প্রণেতা’দের অনুমতি ছাড়া যথাযথস্থানে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলও করা যাবে না, বিচার/প্রতিকার তো দিল্লি দূরস্ত। এই শিক্ষাঙ্গনের এইরূপ প্রতিবেশ-পরিপ্রেক্ষিত থেকে নৈতিকতাসম্পন্ন নাগরিক বেরিয়ে আসবে কল্পনাও করা যায় না এবং প্রকৃতপ্রস্তাবে স্বাধীনতা পরবর্তী দশকরে পর দশক জুড়ে তাই হয়েছে। দেশ পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রেÑ তা হোক সমাজ-রাষ্ট্রের রাজনীতি, বাণিজ্য, প্রশাসনের পরিসরÑ এই ‘সিএফসি’ প্রজন্মের মানবসন্তানেরা সমস্ত জনসাধারণকে বন্ধু নয় ‘অপর’ পক্ষ করে তোলে ‘প্রভু ’ হয়ে বসেছেন, নামান্তরে নৈরাজ্যের সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যে-সা¤্রাজ্যের অধিবাসী আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা। অবশ্য তিনি বাদে, যিনি এই কয়েক বছর আগে হঠাৎ করেই ‘আলাদিনের প্রদীপ’ পেয়ে গিয়ে পথের ভিখারি থেকে ধনকুবের হয়ে উঠেছেন।
এই বিষয়ে সম্পাদকীয়র সংক্ষিপ্ত পরিসরে এর বেশি কীছু বলার কোনও অবকাশ নেই। কেবল বলি মানুষ তৈরির কারখানা শিক্ষাঙ্গনকে সকল প্রকার মানবতাবিরোধী অশুভ প্রবণতা থেকে মুক্ত করুন। শিক্ষিত হয়ে ‘সিএফসি’র আদর্শে আদর্শায়িত হয়ে অকারণ অজুহাতে কেবল নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রকাশ করার ও ভয়ের বিভীষিকা বিস্তার করে শাসন-শোষণের রাজত্ব কায়েমের অভিপ্রায়ে ১০ জনে মিলে ১ জনকে পেটানোর সংস্কৃতি থেকে জাতিকে সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। কারণ ইনারাই একদা দেশ পরিচালনার ভার পাবেন, যেমন ইতোমধ্যে ‘উপপক্ষ’রূপে অন্তরালে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।