গতকালের সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল বখাটেপনার প্রতিরোধের প্রসঙ্গে। আজও তাই। বার বার একটি প্রসঙ্গ নিয়ে লেখার কোনও সার্থকতা নেই বলে সঙ্গত কারণেই কারও কারও মনে হতে পারে। এমন মানসতার বিরোধিতা করার কোনও সার্থকতাও নেই বলে কারও কারও মনে সঙ্গত কারণে যৌক্তিকতার জন্ম হলে সেটাকে সম্মান দেখাতেই হয়, না দেখিয়ে পারা যায় না। সাধারণভাবে আমরাও এই প্রবণতার একেবারে বাইরে অবস্থান করি না। কিন্তু তারপরেও প্রতিকারার্থে প্রতিবাদী লেখালেখি, সভা-সমাবেশ, আইনি পদক্ষেপ ইত্যাদি শত রকমের প্রতিরোধ তোলার পরেও একের পর একটি বখাটেপনার ঘটনা ঘটেই চলেছে সারা দেশজুড়ে। এই অস্বস্তিকর অবস্থাকে কী করে এড়িয়ে যাই। এড়ানো তো যায় না। গত ৩১ মে বখাটেপনার প্রতিবাদ করার কারণে বখাটে কর্তৃক ছুরিকাঘাতে আহত এক কলেজ ছাত্র চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার (১৪ জুন ২০২৩) মৃত্যুবরণ করেছেন। গত বৃহস্পতিবারের (১৫ জুন ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের এ সংক্রান্ত সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘বখাটেপনার প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাত : ১৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেল কলেজছাত্র ইফতি’। এই ইফতি ছাতক উপজেলার বাসিন্দা।
বাংলাদেশ একটি বহুবিধ সমস্যাক্রান্ত দেশ। এর আর্থরাজনীতিক সমস্যা সবচেয়ে গভীর ও সবচেয়ে ক্ষতিকর, যা বাংলাদেশকে একশ্রেণির অর্থলোভী দুর্নীতিবাজের সম্পদ উৎপাদনের খামারে পরিণত করেছে, যেখান থেকে তারা সম্পদ পাচার করছে, ব্যাংকব্যালেন্স বড় করছে, দেশের জন্য কীছু করছে না। দেশের মানুষ কাজ করে বেঁচে থাকতে চায়, অথচ তারা দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা করছে না, বিদেশে বেগমপাড়া ঠিকই গড়ে তোলছে। এইসব যাবতীয় সমস্যার মধ্যে বখাটেপনাও একটি সমস্যা বটে, যদিও সার্বিক বিবেচনায় এটি সে-রকম বড় মাপের সমস্যা নয়, তারপরেও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গকরণে কীছুতেই কম যায় না। বলা বাহুল্য বড় সমস্যার তুলনায় এটি একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্রতম সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যাটির ভয়াবহ রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যখন এটি সন্ত্রাসী রূপ পরিগ্রহ করে প্রতিবাদ করতে সাহসী হয়ে উঠা কারও না কারও প্রাণ হরণ করছে। বাংলাদেশের রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সর্বত্র চলছে বখাটেপনা, বহুবৈচিত্র্যময় রূপে-রূপান্তরে। প্রতিবাদকারী সাহসী মানুষকে বখাটেরা এইভাবেÑ ইফতির মতোÑ মেরে ফেলছে কিংবা হুমকি-ধামকির ফাঁদে ফেলে নিশ্চেষ্ট করে রাখছে প্রতিনিয়ত এবং বিপরীতে আমরা সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিনিধিরা বিচারের নামে, মানবতার নামে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখছি এবং এটা জানার পরও যে, সমাজসংসারের তাবৎ মানুষকে এই দুর্বৃত্তরা কোনও দিনই ছাড়েনি, ছাড়ছে না এবং ছাড়বে না, অন্তহীন নির্যাতনের মধ্যেই রেখে দেবে। এই নিরিখে যে-কেউ ভাবতেই পারেন যে, বখাটেদের কাছে এই সমাজ আত্মসমর্পণ করে বসে আছে, ব্যক্তি ইফতির মতো সামষ্টিকভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠছে না। অর্থাৎ এই বখাটে দুর্বৃত্তরাসহ অন্যান্য প্রকারের সকল দুর্বৃত্তরা এই সমাজ-সংসারের লাগাম হাতে শয়তানির রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল ও রাখবে এবং নিয়মিত নির্যাতনের মাঝে সাধারণ মানুষের জীবননির্বাহের নিয়তির ¯্রষ্টা হয়ে যেমন ছিল তেমনি চিরদিন থাকবে। প্রকারান্তরে সমাজে সাহসী মানুষ বলে কেউই থাকবে না এবং সমাজটা একটা কাপুরুষের সমাজে পরিণত হবে, মানবতা বলে কীছুই থাকবে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সহপাঠীসহ এলাকাবাসী খুনীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন’। সে-দাবির সমর্থনে সোচ্চার হয়ে আমরা অপরাধী খুনীর প্রতি দয়া দেখানোর প্রচলিত কাপুরুষ মানবতাকে ধিক্কার দিয়ে বলছি, এমন হতে পারে না কিছুতেই, এর একটি প্রতিকার চাই। সমাজসংসারের সকলের কাছে আহ্বান রাখছি এর বিহিত করুন। বাখাটেসহ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক ও ব্যবসায়ীকে প্রতিরোধ করুন ও ঘৃণা করুন, সামাজিকভাবে বয়কট করুন।