হাওরাঞ্চলে হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কোনও ঘটনা নয়। ২০১৭ সালে শতভাগ ফসলহানির ঘটনায় হাওররক্ষা বাঁধে অবাধ দুর্নীতির বিষয়টি জনসম্মুখে নগ্নভাবে উন্মেচিত হয়। তখন থেকেই বিষয়টি সাধারণ মানুষের নজরে আসে, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উঠতে থাকে। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে এবং দুর্নীতিবাজরা আন্দোলকদেরকে চুপ করে দিতে পারিতোষিক দেওয়ার বন্দোবস্ত পাকা করতে কসুর করেন না। তারই নমুনার প্রকাশ ঘটেছে গত সোমবারে প্রকাশিত সংবাদে।
দুর্নীতিচর্চার এই সংস্কৃতি বলা যায় বেশ পুরনোই এবং জনসাধারণের মধ্যে বেশ পরিচিতও বটে। কিন্তু এবার নতুন করে অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিকদের জড়িয়ে, প্রকারান্তরে বলা হচ্ছে, হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাটের সঙ্গে সংবাদিকরাও লেটপেটিয়ে আছেন। অর্থাৎ এতোদিন যা আড়ালে ছিল, তা এখন প্রকাশ্যে এসেছে। সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী এই অপকর্মে সাংবাদিকদের যে-ই জড়িয়ে পড়–ন না কেন আমরা তার কঠোর নিন্দা জানাই।
উদ্ভূত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে গত সোমবারের (১৭ এপ্রিল ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের সংবাদ শিরোনাম ছিল, “পিআইসি’র সদস্য সচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ॥ মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক জয়ন্ত সেনকে হয়রানি” এবং অন্য একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল, “বাঁধের কাজে দুর্নীতি ঢাকতে অপচেষ্টা ॥ সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে খুশি করার অভিযোগ পাউবো প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে”।
সাংবাদিকদের কে বা কারা ‘খুশি’ হয়েছেন, আপাতত আমাদের জানা নেই। কিন্তু কথা হলো, হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজে দুর্নীতি অব্যাহত আছে নতুন করে সে-বার্তাই পরিবেশিত হলো, পাউবো’র কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের খুশি করার অপপ্রয়াস চালানোর অভিযোগ উঠার ঘটনায়। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিটি পর্যায়ের পূর্বাপর ঘটনার ও তার বাস্তবতার পারম্পর্য খতিয়ে দেখলে সহজেই প্রতিপন্ন হয় যে, প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি অবশ্যই সংঘটিত হয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত তার গোপন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় নি।
আমরা জবরদস্ত কীছু বলতে চাই না, কেবল বলতে চাই, এই হাওর-দুর্নীতির অবসান অবশ্যই হওয়া উচিত, দেশের ও কৃষকের স্বার্থে। ভুলে গেলে চলবে না, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সে-জন্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যাঁরা হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন তাঁদেরকেই নির্মাণকাজে দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ার সামগ্রিক দায় নিতে হবে ও জবাবদিহিও করতে হবে এবং সেই সঙ্গে দুর্নীতি বন্ধেরও সর্বপ্রকার প্রয়াস-ব্যবস্থা করতে হবে। এর কোনও অন্যথা হতে পারে না, আপাতত এর কোনও বিকল্প নেই।
আর এর বাইরে গিয়ে বিকল্পের কথা চিন্তা করতে গেলে ‘উজো কথায় গুঁজো বেজার’ হলেও বলতে হবেÑ একটা সামাজিক বিপ্লব চাই। যে-বিপ্লব যাবতীয় সম্পত্তিতে ব্যক্তিমালিকানার অধিকার উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। তাহলেই দেশে দুর্নীতি থাকবে না। অন্যথায়, মন্দের ভালো হলেও, অন্তত দেশটাকে জাপানের মতো বানিয়ে দিতে হবে।