বছর ঘুরে আবার এলো পহেলা বৈশাখ। বাংলা ১৪৩০ বর্ষের প্রথম দিন। বাংলার মানুষের আবহমান কৃষি ও সমাজ জীবনাচরণের এই প্রারম্ভ দিন ধারণ করে আছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নিজস্বতার জগৎ। তাই বৈশাখ-বরণ বাংলার প্রাণের উৎসব। এই উৎসব কালক্রমে আনন্দ উদযাপন ও চিরায়ত চর্চায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির সর্বজনীন উপলক্ষ হয়ে উঠেছে যেমন; তেমনি ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে এই উৎসব আজ অবিনাশী প্রতিজ্ঞায় মিলিত হওয়ার কেন্দ্র। আজ মঙ্গলের প্রত্যাশায়, কল্যাণের প্রত্যাশায়, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ভালোবাসার প্রত্যাশায় পহেলা বৈশাখের প্রত্যুষে প্রতিটি বাঙালির কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হবে সেই উজ্জীবনী আবাহন। যা কিছু জীর্ণ, পুরাতন ও অকল্যাণকর – সব দূর হয়ে যাক। প্রাণের বন্যায় আনন্দের ডালি সাজিয়ে আসুক নতুন বছর।
প্রকৃতপ্রস্তাবে সময়ের বৃত্ত পূরণ করে প্রতিবছরই আসে পহেলা বৈশাখ। সেই সঙ্গে প্রতিবছরই থাকে উৎসবের আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যাপক আয়োজনে দিবসটি উদযাপিত হবে। বাঙালির সংস্কৃতি ধ্বংসের যে অপচেষ্টা তদানীন্তন পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল, তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছিল ছায়ানট, তা আজও বাঙালির এক অমলিন ঐতিহ্য হয়ে টিকে আছে। দিনে দিনে বাঙালির ভাবনায়, চেতনায় জোয়ার জাগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি ভাবধারার মানুষের কাছে এই উৎসব অন্তর্জ্বালা সৃষ্টিকারী এক আয়োজন। তাই তারা যতভাবে সম্ভব নববর্ষ উদযাপনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়, অন্তর্ঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং বোমা হামলা চালায়। কিন্তু সংস্কৃতির ¯্রােত, ঐতিহ্যের আকর্ষণ কখনো কারো ষড়যন্ত্র বা রক্তচক্ষু দেখে থেমে থাকে না। আজও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামবে।
আমাদের বিশ্বাস, এবারের বৈশাখ জাতীয় জীবনে নতুন উদ্যম ও শক্তিরূপে আবির্ভূত হবে। আমাদের ¯œাত করবে নতুন সূর্যের আলোয়; মুছে যাবে আমাদের সমস্ত গ্লানি-বেদনা। নববর্ষে আমাদের অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।