নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। চালকদের বেপরোয়া মনোভাব ও অদক্ষতার কারণে বারবার তা ব্যর্থ হচ্ছে। ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
গবেষকদের মতে, সড়কের সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত গাড়ি, বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিংয়ের কারণেই দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।
বেসরকারি সংগঠনগুলো কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিল গত মার্চ মাসে দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ শতাধিক। তবে সরকারি হিসাবে জানানো হয়েছে, মার্চে সারাদেশে ৩৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৫ জন। আহত হয়েছেন ৬৮৮ জন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যেও বরাতে গতকাল সোমবার এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। গত বৃহ¯পতিবার বিআরটিএ এ তথ্য প্রকাশ করে। তবে এর আগের দিন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছিল, মার্চ মাসে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৯৭ জন আহত হয়েছেন। একই দিনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়ে ছিল, মার্চে ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত এবং এক হাজার ১৩৮ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মার্চে ৫৩৬টি যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ তথা ১০০টি মোটরসাইকেল। দুর্ঘটনায় নিহত ৮৭ জন ছিলেন মোটরসাইকেলে চালক বা আরোহী। যা মোট নিহতের প্রায় ২১ শতাংশ। সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ১১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত এবং ১৩২ জন আহত হয়েছেন।
চলতি বছর থেকে প্রতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা সরকারিভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। বিআরটিএর হিসাবে জানুয়ারিতে ৩২২টি দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জন নিহত হন। ফেব্রুয়ারিতে ৩০৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৩০৩ জনের। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৬৭ জন।
এ সব পরিসংখ্যান আমাদের জানান দিচ্ছে দিন দিন সড়ক কতোটা অনিরাপদ হয়ে উঠছে। যে কোন দুর্ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। সড়কে যে ভাবে মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে তা যে করেই হোক কমাতে হবে। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। দক্ষ চালক তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক চালক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না গেলে মৃত্যুর মিছিল দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাবে। দুর্ঘটনার কারণে যে শুধু মানুষের মৃত্যু হয় তা কিন্তু নয়। বরং বহু মানুষ পঙ্গত্ব বরণ করে।
একটি পরিবারের কর্মক্ষম মানুষ যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে বা পঙ্গু হয়ে যায় তখন সেই পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করে। এরকম হাজারো পরিবার সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের উন্নয়নে অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই আর সময় ক্ষেপণ নয় বরং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়নসহ আইন প্রয়োগে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে দরকার ইতিবাচক মানসিকতা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। তাই এ মুহূর্তে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের বিকল্প নেই।