গত শনিবারের (৮ এপ্রিল ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালাবদ্ধ, দুটি চলছে খুঁড়িয়ে’। এই প্রতিবেদনটির মর্মার্থ একটাই, আর সেটা হলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বিরাজমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থার কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কথা হলো সরকার তো স্বাস্থ্যকেন্দ্র করে দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলো ঠিকঠাকভাবে চলছে না। কেন চলছে না? এই প্রশ্নের কোনও সদোত্তর নেই। আর যাঁরা উত্তর দেওয়ার মতো তথ্যভা-ারের অধিকারী তাঁদের মুখ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতোই তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
একটু অতীতের দিকে মুখ ফেরানো যাক। যারা একটু খবর রাখেন তাঁরাই জানেন ১৯৭৫-এর আগে এক এক করে ৭২টি পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল এবং লক্ষাধিক রাজনীতিক খুনের সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকে। এরই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত আদমজি জুট মিলের মৃত্যু নিশ্চিত করে প্রকারান্তরে বাংলাদেশে পাট ব্যবসার পাট চুকিয়ে দিয়ে ভারতের পাট ব্যবসাকে উজ্জীবিত করা হয়েছিল পুরোদমে এবং বর্তমানে পাট ব্যবসার সিংহভাগ মুনাফা লাভ করছে একটি প্রতিবেশী দেশ।
ইতিহাসের এই তথ্য জেনে কেউ যদি ভাবেন যে, একদা পাটের মুনাফা কোনো পক্ষকে পাইয়ে দেওয়ার জন্যে যেমন একটি প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছিল, প্রকারান্তরে বর্তমান সময় পরিসরে জনবান্ধব সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত না করে তালাবদ্ধ করে রেখে অর্থাৎ অকেজো করে রেখে অন্য কোনও পক্ষের স্বার্থোদ্ধার করা হচ্ছে। এই পক্ষ প্রতিনিধি ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার অধীনে হতে পারে দেশের অথবা বিদেশের কেউ বা কোনও বাণিজ্যিক প্রতিপক্ষ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর এই বেগতিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যখাতের নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যে-কেউ এমনটা ভাবতেই পারেন।
সে যা-ই হোক স্বাস্থ্যখাতের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে উঠবে দেশ, আমরা সে – প্রত্যাশায় রইলাম। সেই সঙ্গে আশা করছি, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে গিয়ে যেমন ধনীর ধনের আঢ্যতাকে অঢেল করে তোলেছে তেমনি করে স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে চিকিৎসাসেবাকে দেশের নামি দামি ক্লিনিক ও বিদেশ নির্ভর করে তোলবে না। দেশের সাধারণ মানুষের অধিকাংশ, যাঁরা নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষ, তাঁদেরকে উচ্চমূল্যের চিকিৎসাসেবার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবেনা – এই আশা ব্যক্ত করছি।