গত মঙ্গলবারের (৪ এপ্রিল ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক সংবাদ প্রতিবেদেনে এবার বোরো ধানের প্রচুর ফলনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। শিরোনাম করা হয়েছে, ‘বোরোর বাম্পার ফলনের আশা’। বলা হয়েছে, ‘প্রকৃতি যদি সহায় থাকে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই আশার মধ্যেও উদ্বেগ কাটেনা কৃষকের। কারণ অতিবৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢল এবং নড়বড়ে ফসলরক্ষা বাঁধ ফসলহানির ঝুঁকি তৈরি করে প্রতিবছরই।’ তারপরও হাওরাঞ্চলের মানুষেরা স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত সে-ফলনের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু এই প্রেক্ষিতে একটি কথা না বললেই নয়। প্রতিবেদনে একটি কথা বলা হয়েছে, ‘তবে এই আশার মধ্যেও উদ্বেগ কাটেনা কৃষকের’। এই ‘উদ্বেগ’টি অনিশ্চিত ও মানব নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। আরও যে-একটি উদ্বেগের কথা প্রতিবেদনে বলা সম্ভব হয়নি, সেটা হলো, কৃষকের গোলায় ধান উঠার পর ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণের কারসাজিতে ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রির মর্মান্তিক বাস্তবতার উদ্ভব, যা উৎপাদন খরচের কম দামে ধান বিক্রি করতে কৃষককে বাধ্য করে। এই বাধকতার ঝুঁকি থেকে কৃষককে রক্ষা করতে হবে।
বিস্তারিত করে এই সম্পাদকীয়তে ‘বোরো ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণের কারসাজি’ সম্পর্কে বলার আপাতত কোনও অবকাশ নেই। কেবল বলি, প্রতি বছরের মতো এবারও অবশ্যই সরকার কর্তৃক ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে, সরকার কর্তৃক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে এবং যথারীতি শেষ পর্যন্ত কৃষকরা ধানের সরকার নির্ধারিত দাম পাবেন না, সরকারের কাছে সরাসরি ধানও বিক্রয় করতে পারবে না। প্রকারান্তরে সরকার ঘোষিত কৃষকবান্ধব কৃষিনীতি কৃষকের কোনও উপকারেই লাগবে না, ধান চাষের সমগ্র লাভ কিংবা মুনাফা, যা-ই বলিনা কেন, সেটা এক ধরনের ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের থলিতে গিয়ে জমা পড়বে, যেমন প্রতি বছর গিয়ে পড়ে। অভিজ্ঞমহলের ধারণা ধান চাষের ক্ষেত্রে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিকে প্রতিবছর ব্যর্থ করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে এদেরকে প্রতিহত করা দরকার, তানা হলে কৃষক সমাজকে বাঁচানো যাবে না, তাঁরা ক্রমে নিঃস্ব হয়ে জমি হারিয়ে শ্রমিকে পরিণত হবে। পরিশেষে বলার কথা একটাই, কৃষকসমাজকে রক্ষা করুন, দেশ বাঁচান। কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে।