1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ১১:১১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ প্রসঙ্গে

  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩

যখন বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না’ তখন অন্তরে আশার পিলসুজে প্রজ্জ্বলিত দীপ শিখার সলতেটাতে যৎকিঞ্চিৎ তৈল গলিয়ে পড়ে। একবার বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’। পাকিস্তানিরা চেষ্টার ত্রুটি করেনি, কিন্তু দামাল বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি, হানাদারকে পরাজয়ের কলঙ্ক তিলক পরে বাংলার মাটি ছাড়তে হয়েছিল। এবার পালা পিছিয়ে না পড়ার।
‘পিছিয়ে থাকবে না’ বাক্যবন্ধটি বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে কথাটি ঠিক বটে, কিন্তু বর্তমান মন্দাক্রান্ত বিশ্ব পরিস্থিতির সাপেক্ষে একেবারে পিছিয়েপড়াদের কাতারের সর্বশেষ অবস্থানে কিংবা প্রান্তিক পর্যায়ে পড়ে নেই বাংলাদেশ। এইখানে অতীতের তুলনায় অভাবনীয় স্বল্প সময়ে একটা আর্থনীতিক অগ্রগতি তো অর্জন করেছে বাংলাদেশ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থাৎ পুঁজিবাদী নিরিখে উন্নয়নশীল দেশে পর্যবসিত হয়েছে। এজন্যেই উন্নয়নের পরিসরে অনুন্নয়নের পঙ্কিলতা প্রচ্ছন্ন হয়ে উন্নয়নের সঙ্গে মিশে আছে।
সংবিধানে সামাজিক সমতার বিধানের বিপরীতে পুঁজিবাদী উন্নয়নের পরিসরে মুষ্ঠিমেয় মানুষ ধনী হচ্ছে এবং সিংহভাগ মানুষ নি¤œবিত্ত স্তরের এদিকে ওদিকে অবস্থান করছে, তাদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে ধনবৈষম্য বাড়ছে। একজন ধনী হচ্ছে শত শত কিংবা হাজার মানুষকে নির্ধনী বানিয়ে। প্রকৃতপ্রস্তাবে এই ধনবৈষম্য বাড়ার নিহিতার্থ হলো, অভাবনীয় ও প্রভুত উন্নতির পরও প্রকৃতপ্রস্তাবে দেশ পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় সব ক্ষেত্রে এগিয়ে তো নয়, তাই সত্যি। জানাকথা কীছু কীছু ক্ষেত্রে তো পিছিয়ে আছেই।
একটি সংবাদ পাওয়া গেছে তাহিরপুর থেকে। সংবাদের শিরোনামটা করা হয়েছে, ‘তাহিরপুরে ইউএনও-র হস্তক্ষেপে বন্ধ হল বাল্যবিয়ে’। এটি দেশের পশ্চাৎপদতার প্রমাণ, উন্নত দেশে এমনটি সাধারণত হয় না। সেখানকার সাংস্কৃতিক মানটা এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে সেখানে কেউ বাল্যবিয়ে করার কল্পনাও করে না। বিয়ে না করে নারী-পুরুষ বছরের পর বছর সহবাসী হয়ে থাকে, বিয়ের আগে বাচ্চাকাচ্চা হয়, তারপর সুযোগ বুঝে বিয়ে করে, বুড়ো বয়সে। আমাদের দেশের লোকেদেরকে তেমন অধর্ম করতে বলছিনা, তবে বাল্যবিয়ে না করার জন্যে তো বলতেই পারি। সরকার বলতে কসুর করছেনা। কিন্তু লোকে যে শুনছেনা, কার্যত তাই প্রতিপন্ন হচ্ছে।
সরকারের সর্বোচ্চ মাত্রার প্রচেষ্টার পরও সাধারণ মানুষের চেতনায় এই বাল্যবিয়েকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এতেই প্রতীয়মান হয় যে, দেশ আসলেই মর্মে মর্মে পিছিয়ে আছে, তার নমুনা-সাবুদ হলো বাল্যবিয়ের প্রবণতা নির্মূল হয়নি।
এই বাল্যবিয়ের মতো আরও অনেক এমন প্রপঞ্চের (সমাজ বাস্তবতার) নমুনা দাখিল করা খুব একটা কঠিন কীছু নয়। যে-নমুনাগুলো সমাজের সাংস্কৃতিক দারিদ্র্যকে প্রতিফলিত করার সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়েপড়া সমাজ মানসতার আভাস দেয়। এই ধরনের পশ্চাৎপদতার উদাহারণ দিতে হলে আস্ত একটি মহাভারত রচনা করা যাবে। আপাতত তা তো সম্ভব নয়। কিন্তু যেটা বলা সম্ভব সেটা হলো : পশ্চাৎপদ মানুষের চেতনাকে পশ্চাতে পড়ে থাকতে দিলে চলবে না, তাঁদের চিন্তায় আধুনিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতার বিস্তার ঘটাতে হবে। তার জন্যে যেমন বাল্যবিয়ের কুফল সংক্রান্ত প্রচারকে আরও জোরদার করতে হবে, তেমনি জনগণের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসারসহ দেশের প্রতিটি দরিদ্র নাগরিকের আর্থনীতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, মেয়েকে খাইয়ে পরিয়ে প্রতিপালনের দায় নির্বাহের অক্ষমতা বাল্যবিয়ের একটি প্রধান কারণ।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com