‘অনিয়ম রোধে কার্ডের মাধ্যমে ওএমএসের (খোলা বাজারে বিক্রি) চাল ও আটা বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।’ জাতীয় জীবনে এই নির্দেশ বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্যক উপলব্ধি করতে পারেলে সহজেই বোধোদয় হয় যে, জাতীয় জীবনে এই মুহূর্তে গাধার মতো ঘোলা জল পান করে জীবননির্বাহের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক পঙ্কিলতার কাল শেষ হওয়ার সময় এসেছে। এই নির্দেশের জন্য জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
একদা বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সাধারণ নাগরিকের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থাটি চালু ছিল গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। কিন্তু তৎকালে ইউএসএইড এবং বিশ^ব্যাংক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণ দেখিয়ে সে-রেশন ব্যবস্থাটি বন্ধ করে দেয়। বিপরীতে বিভিন্ন শর্তাধীন খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করে। যেমন টিসিবি’র মাধ্যমে মাঝেমধ্যে বাজারদরের চেয়ে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি, ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের চাল বিক্রি ইত্যাদি। কিন্তু যে-অনিয়ম-দুর্নীতির অজুহাতে চালু রেশন ব্যস্থাটিকে অচল করা হয়েছিল সে-অনিয়ম-দুর্নীতি কিন্তু একটুকুও কমে নাই বরং সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থসিদ্ধির ব্যবস্থা হিসেবে নতুন ব্যবস্থাটির ফাঁকফোঁকরে আরও বেড়েছে এবং শেষ পর্যন্ত অবস্থা-বেগতিকে-পড়ে এখন সেই পুরনো ব্যবস্থায়ই ফিরে যেতে হচ্ছে। রেশনকার্ড প্রচলনের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ সে-জন্যই জাতির জন্যে অতীব তাৎপর্যবহ।
প্রকৃতপ্রস্তাবে সত্য এই যে, দেশে কোনও কার্যকর খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠে নি, অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। যে-খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে সেটি অনিয়ম ও দুর্নীতির পাঁকে পড়ে কার্যকর হতে পারে নি অথবা পারছে না। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের মূলের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত নয়। অপরদিকে দরিদ্র ও নি¤œবিত্তের মানুষের কাছে নিত্যপণ্য কম দামে সরবরাহ করার ব্যবস্থ গ্রহণ করার পরও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন ওএমএসের কার্ডগুলো পেয়ে যাচ্ছে ধনী-নির্ধনী নির্বিশেষে সরকার সমর্থিত দলীয় লোকেরা, প্রকৃতপ্রস্তাবে গরিব ও নি¤œবিত্তরা পাচ্ছে না এবং প্রকারান্তরে সরকার নির্দেশিত খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। আসলে ব্যবস্থাটিকে হতে হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধী একটি ব্যবস্থা। যাকে বলা যাবে একটি মজবুত ও কার্যকর গণবণ্টন ব্যবস্থা। সর্বাগ্রে রেশনের জন্য উপযুক্ত পরিবার শনাক্ত করে তারপর রেশনকার্ড ইস্যু করতে হবে, সঙ্গে থাকবে রেশন দোকানের তদারকি। রেশনকার্ড পেতে পারে এমন উপযুক্ত পরিবার শনাক্ত করার ক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতিসঞ্জাত স্বজনপ্রীতি শতভাগ পরিহার করতে হবে, রেশনদোকানের তদারকিটিকে হতে হবে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত এবং সমগ্র কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়কেই হতে হবে জবাবদিহিমূলক। তদুপরি সমস্ত কার্যক্রমটিকে ডিজিটালইজ করে দিয়ে রেশন সরবরাহে বায়োমেট্রিক পরিচয় পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তা-না হলে যতই ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন কোনওটারই কোনও উপযোগিতা থাকবে না কিংবা কার্যকর কোনও ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।