কিছুদিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়মে পরিনত হয়েছে। বিদ্যুৎ কখন আসে তারও ঠিক নেই। বিদ্যুতের এমন ভেলকিবাজিতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষসংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘ঘনঘন লোডশেডিং : বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে ১৮ হাজার গ্রাহক’। সংবাদে বলা হয়, ‘সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৮ হাজার গ্রাহক এখন নিয়মিত বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে রয়েছেন। রাতদিন দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ফলে ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত গরমে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হওয়ায় ছাতক-সুনামগঞ্জের ৩৩ কেভি লাইন ঘনঘন পোড়ে যায়। বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহারের ফলে এবং জাতীয় গ্রীড থেকে সঞ্চালনের ফলে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে। জাতীয় গ্রীড থেকে চাহিদার সবটুকু বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তাই অতিরিক্ত লোড পড়ে লাইনে। যে কারণে তার গরম হয়ে পুড়ে যায়। তাছাড়া গরমের কারণেও গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় সঞ্চালন লাইনে চাপ পড়ে। এতে লাইন ঘনঘন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন খুঁজে বের করে মেরামত করতে অনেকক্ষণ চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ-ছাতক ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয় প্রায় ৫০ বছর আগে। আধুনিকায়ন না হওয়ায় এখন প্রায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায়। আর খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা বছরের পর বছর ধরে। সরবরাহ লাইনে ত্রুটি একটি কারিগরি বিষয়। সাধারণ মানুষ তা বুঝবে কেন? তাদের কাছে বিদ্যুৎ না থাকার একটাই অর্থ- লোডশেডিং এবং সে কারণে ভোগান্তি। যেকোনো কারিগরি ব্যবস্থায় আকস্মিক ত্রুটি দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। কর্তৃপক্ষের দায় হচ্ছে ব্যবস্থাটিকে টেকসই ও আধুনিক করে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনা। কোনো ব্যবস্থাকে তখনই টেকসই বলা যায়, যখন উৎপাদন থেকে ব্যবহার পর্যন্ত সার্বিক প্রক্রিয়াটি ত্রুটিমুক্ত থাকে। বিদ্যুতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবা নিরবচ্ছিন্ন করতে না পারায় শুধু গ্রাহকরাই অতিষ্ঠ নয়, সাথে অর্থনীতির জন্যও দুঃসংবাদ। আমরা আশা করব, চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনই শুধু নয়, বিতরণ ব্যবস্থাও টেকসই করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।