ঠাকুরগাঁয়ের এক জবরদস্ত রাজনীতিক দখল বাণিজ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন বলে সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠের খবর থেকে জানার সৌভাগ্য হয়েছে দেশবাসীর। এ সম্পর্কে গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর ২০২২) কালের কণ্ঠের শিরোনাম ছিল “ঠাকুরগাঁয়ে এক নেতার দখলসন্ত্রাস ॥ আপেলের হুমকি ‘গুচ্ছগ্রামে চলে যাও, মেরে ফেলব’।”
ঠাকুরগাঁও থেকে ফিরে সংবাদ করেছেন পত্রিকার দুই সাংবাদিক। আগেরদিন বুধবারের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘ঠাকুরগাঁয়ে আপেল আতঙ্ক’। এই নেতা কোন্ দল করেন, কোন্ পদে আছেন এবং কী নাম তাঁর সে-সব খবর জানার আপাতত কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কিন্তু তাঁর কার্যকলাপ প্রমাণ করছে যে, দেশে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি কার্যকর আছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তা-না হলে কোনও এক নেতা ৬০/৭০ জনের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে মারধর করে লোকজনের ঘরবাড়ি দখল করে নেবেন, সরকারি দিঘী দখল করে মৎস্যচাষ করবেন, লোকজনদেরকে খুন করার হুমকি দেবেন এবং এমনকি ইতোমধ্যে খুন করে পার পেয়ে যাবেন, এমনটা কী করে হয়। গ্রামান্তরের লোকজন তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠবেন কিন্তু ‘ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’র মতো করে সব কীছু অস্বীকার করবেন, সমাজ-সংসার, রাজনীতিক শক্তি, প্রশাসন নীরব থাকবে, কী করে হয়? যদিও সাংবাদিক নীরব থাকেন নি।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে দেশে কি আইন নেই, দেশের চেয়ারম্যান, মেম্বার, মাতব্বর কিংবা রাজনীতিক দলের জনপ্রতিনিধি ও কর্মীরা কি নেই। এতোকীছুর পর রাজনীতিক দল, থানা কীছুই জানতে পারছেন না। থানা জানলেও অভিযোগ পাওয়া যায়নি এই অজুহাতে হাত-পা গুটিয়ে রেখেছেন, প্রকারান্তরে প্রমাণ করছেন জানেন না। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসের কাছে অসহায় এবং কার্যত প্রশাসন অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। এমন অবস্থা বোধকরি কেবল ঠাকুরগাঁওয়েই নয় কমবেশি দেশের সর্বত্রই বিরাজ করছে।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন, এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক বরং না হওয়াটা অস্বাভাবিক। তাঁদের যুক্তি এই যে, যদি কোনও দেশে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ চলতে থাকে তবে এমনটাই হয়। ক্রোনি ক্যাপিটালিজম হলো, আমলা, ব্যবসায় ও রাজনীতিবিদ এই তিন শ্রেণি জোট বেঁধে কোনও দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে সে-দেশে এমন নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির আবির্ভাব ঘটে। বাংলাদেশে বিলক্ষণ তারই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দেশে যতই উন্নয়ন হোক, আরও বেশ ক’টি পদ্মা সেতু হয়ে যাক না কেন দেশে ‘আপেল আতঙ্ক’ বিরাজিত থাকলে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
আমরা কেবল একটা কথাই বলতে চাই, শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ যতোটা এগিয়েছে সে-অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরবেন না, দয়া করে এইসব ‘আপেল আতঙ্ক’র হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করুন, ফ্রাঙ্কেন স্টাইনকে প্রতিরোধ করুন।