আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের বহরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সিরামিকের সামগ্রী বিক্রেতা আলমগীর হোসেন। বর্ডার হাটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিনহাজার টাকার মালামাল বিক্রি করেছেন তিনি। আলমখালী গ্রামের বাসিন্দা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। সকালে কাঁচামাল নিয়ে বসেছেন। দুপুর পর্যন্ত এক টাকার কাঁচামালও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। তাঁর দোকানে ক্রেতা দেখা যায়নি। বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভাঙাপাড়া গ্রামের মেলামাইনের সামগ্রী বিক্রেতা সুমন। দুপুর পর্যন্ত মাত্র ১৫০০ টাকার মালামাল বিক্রি করতে পেরেছেন। একই গ্রামের খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতা আব্দুর রহমান। দুপুর পর্যন্ত তাঁর ৬০০ টাকার খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হয়েছে। বর্ডার হাটে ব্যবসায়ী আলমগীর, আবুল হোসেন, সুমন ও আব্দুর রহমানসহ বাংলাদেশী বিক্রেতাদের বসে বসে অবসর সময় কাটছে ক্রেতাদের অপেক্ষায়। আশানুরূপ ক্রেতা না আশায় তাঁরা হতাশ। প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভের মুখ দেখছেন না তারা।
অন্যদিকে পাশের ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দোকানগুলোতে বাংলাদেশী ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ভারতীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে অনেক দূরদূরান্ত থেকে বাংলাদেশী ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বর্ডার হাটের গেইটের সামনে ভিড় করেছেন। বৃহ¯পতিবার দুপুরে বাগানবাড়ি-রিংকু বর্ডার হাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত ১২ মে উপজেলার বোগালাবাজার ইউনিয়নের বাগানবাড়ি সীমান্তে উদ্বোধন করা হয় ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার হাটের। এটির নাম বাগানবাড়ি-রিংকু বর্ডার হাট। প্রতি সপ্তাহের বৃহ¯পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাট বসে। হাটে সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল, খাদ্যসামগ্রী, কসমেটিকস, প্রসাধনী পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, যেখানে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ২ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করতে পারছেন না সেখানে একই সময়ে ভারতীয় বিক্রেতারা ২০ হাজার থেকে ১.৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মালামাল বিক্রি করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হাটে ভারতীয় ক্রেতারা কম আসছেন। ক্রেতাদের অনুপস্থিতির কারণে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না।
সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যর চেয়ে ভারতীয় পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী কেনার জন্য দু’দেশের ক্রেতারা টিকিট কেটে হাটে প্রবেশ করেন। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রেতাই টিকিট না কেটে হাটে প্রবেশ করলেও ভারতীয় ক্রেতারা টিকিট ছাড়া হাটে প্রবেশ করতে পারেন না। ফলে ভারতীয় পণ্য বেশি বিক্রি হয়।
বর্ডার হাটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাটে যে সংখ্যক মানুষের সমাগম হয় সে পরিমাণ বেচা-কেনা করতে পারি না। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যদি এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন, সেখানে আমরা বিক্রি করি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। হাটে বাংলাদেশি ক্রেতা যদি আসে তিন হাজার, ভারতীয় ক্রেতা আসে তিনশো।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এই হাটে পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে যাদের বসতি রয়েছে তারাই মূলত এ হাট থেকে পণ্য-দ্রব্য কিনতে পারেন। অথচ নিয়ম অমান্য করে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে পাইকারি ও খুচরা মালামাল কিনে নিয়ে যায়। ফলে আমাদের পণ্য দ্রব্যের চাহিদা কম। সরকারের কাছে আমাদের দাবি নিয়ম মেনে হাটে মানুষজন আসুক। ভারতীয় নাগরিকরা যেমন সীমিত আসে। আমাদের বাংলাদেশি নাগরিকরা তেমন আসুক।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মউডন এলাকার বিক্রেতা তরুণ, বারিশ ও দেবী বলেন, ভালোই বিক্রি হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ক্রেতাদের উপস্থিতি গত হাটের তুলনায় কম হয়েছে। প্রসাধনী সামগ্রী ও কসমেটিকস বাংলাদেশী ক্রেতাদের বেশি আকৃষ্ট করছে।
বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খান বলেন, প্রতি হাটেই এলাকা ও বাইরের এলাকা থেকে ক্রেতা দর্শনার্থীরা আসছে। বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হাটের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা দেখভাল করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। হাটে উভয় দেশের ক্রেতা, দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়লে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন।