সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ভারতের বিজেপি নেতাদের মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আবারও মাঠে নামার হুমকি দিলো ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে বৃহ¯পতিবার এক মানববন্ধনে ওই হুমকি দেয়া হয়।
ভারতের বিজেপি মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও মিডিয়া সেলের প্রধান নবীন জিন্দাল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার প্রতিবাদে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক ওই সংগঠন।
ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র নূপুর শর্মা এক টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। পরে মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত টুইট করেন নবীন জিন্দাল। ওই ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। অন্তত ১৫টি দেশ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
মানববন্ধনে অংশ নেন হেফাজতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহাসচিব সাজিদুর রহমান, সাংগঠনিক স¤পাদক মীর ইদরিস নদভী, প্রচার স¤পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী।
সভাপতির বক্তব্যে মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা হেফাজতে ইসলাম সাড়ে ৩ বছর ধরে রাস্তায় নামি নাই। আমরা কোনো প্রতিবাদ করি নাই। আমরা মিটিং-মিছিল কিছুই করি নাই। আজকে আমাদের কে রাস্তায় নামালো? আমরা কেন রাস্তায় নেমেছি?
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মরহুম আমীর আল্লামা শাহ আহমেদ শফী যেভাবে ঐক্য গড়ে তুলেন, সেভাবে তৌহিদী জনতার ঐক্য চালু হবে। ইসলামের দুশমনদের মোকাবিলার জন্য আমরা হেফাজতে ইসলাম সোচ্চার ভূমিকার পালন করব। আজকে সেই ঘাদানিক, সেই শাহরিয়ার কবির, তুরিন আফরোজ, তথাকথিত বিচারপতি তারা ওলামাদের কলঙ্কিত করে দ্বীনি শিক্ষাকে বন্ধ করতে চায়। এ দেশকে মুসলমান শূন্য করতে চায়। সরকারের উদ্দেশে হেফাজতের এ নেতা বলেন, আমাদের ওপর বার বার আপনারা হস্তক্ষেপ করবেন, আর আমরা কোনো ব্যবস্থা নেব না, তা হতে পারে না। আমাদের সংগ্রাম হবে আত্মরক্ষার লড়াই।
হেফাজতের মহাসচিব বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের একের পর এক মহানবী ও তাঁর পরিবার নিয়ে কটূক্তি সারা বিশ্বের মুসলমানদের চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। বিজেপি নেতারা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের অন্তরে আঘাত করেছে। বিজেপি নেতারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। যেহেতু ভারতের সরকারি দলের জাতীয় মুখপাত্র এ হীন বক্তব্য দিয়েছে যা ইসলাম ধর্মের ওপর রাষ্ট্রীয় আঘাতের শামিল। তাই সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে তাদের প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
সাজিদুর রহমান বলেন, এবারই প্রথম নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লাগাতার ইসলামের ওপর বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দেশটিতে মুসলমানদের ওপর চলছে নানারকম নির্যাতন। দিন দিন তাদের এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটি সম্ভব হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব চুপ থাকার কারণে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা গ্রহণ করা। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বরাবরের মতো নিরাপদ ও সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করে যাচ্ছে। ভারতের উচিত এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
মানববন্ধনে ৫ দফা দাবি জানায় হেফাজত :
১. ভারত সরকারকে অবশ্যই কটূক্তিকারী দুই বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ২. বিশ্ব মুসলমানদের কাছে ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. অন্যথায় সারা বিশ্বের মুসলমানরা ভারতীয় পণ্য বয়কট করবে। ৪. মুসলমানদের বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে হবে। ৫. কারাগারে আটক আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।