গত শনিবার (৫ জুন ২০২২) বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও হারানো পরিবেশ ফিরিয়ে আনার তাগিদ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দূষিত জলের নদীতে কাগজের নৌকা ভাসানো ও নদীতে একসঙ্গে অনেকে মিলে স্নান করে পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ জানানোর সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হওয়ার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন কোনও কোনও সংগঠন। এক প্রবন্ধে একজন বলেছেন, ‘আমাদের এই গ্রহটির বর্তমানে বড় ধরনের সমস্যা তিনটি। জলবায়ুু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও দূষণ। আর এই ত্রিবিধ সমস্যার মূল কারণ আমরাই। সুখ সুখ খেলায় মত্ত হয়ে আমরা এই গ্রহটির প্রকৃতিকে করছি ছিন্নভিন্ন। এর শ্যামল নিসর্গকে মুছে সেখানে রচনা করছি ইট, কংক্রিট আর ইস্পাতের ধূসর জঙ্গল। ফলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। পৃথিবীর নানা জায়গায় মুহুর্মুহু প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় তীব্র জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা, প্রচণ্ড খরা, ঘন ঘন বজ্রপাত, উপর্যুপরি ভয়াবহ দাবানল, হিমবাহের অস্বাভাবিক বিগলন, সমুদ্র পানির অম্লত্ব ও উচ্চতা বৃদ্ধি, বৃষ্টিচক্রে পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া, মহামারি, অকালমৃত্যু ইত্যাদি ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মানব জাতি এক গভীর অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন।’
এই উপলব্ধি থেকে ইতোমধ্যে বৈজ্ঞানিকদের পক্ষ থেকে পৃথিবীকে একটি মৃত্যুপথযাত্রী গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করে মহাকাশের কোথাও না কোথাও মানবজাতিকে উপনিবেশ গড়তে হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে রাখা হয়েছে, অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করতে না পারলে মানুষের জন্যে গ্রহান্তরযাত্রা একটি অনিবার্য ভবিতব্য হয়ে পড়বে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাসী কিংবা আমরা যতোটা উদ্বিগ্ন এবং সমস্যা নিরসনে চিন্তিত ততোটা সমস্যার কারণকে নিরসনে সোচ্চার নই। বর্তমান বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত আর্থনীতিক কর্মকাণ্ড সর্বতোভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলেছে। এই প্রকৃতিধ্বংসকারী অর্থনীতিকে পরিবর্তন করে প্রকৃতিবান্ধব অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অন্যথায় যে যতোই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কিংবা পরিবেশ উন্নয়নে সোচ্চার হোন না কেন প্রকারান্তরে তা অন্তঃসারশূন্যতায় পর্যবসিত হবে। অর্থাৎ কাজের কোনও কীছু হবে বলে মনে হয় না। চেচামেচিই হবে সার।