সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সাময়িক ছাড় দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়ে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিকভাবে দলটির যেকোনো সহিংস কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, রাজপথেই বিএনপিকে প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৭ মে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। এরপরই দলটি আন্দোলনের নামে শেখ হাসিনাকে নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। ছাত্রদলকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। এমনকি ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগান দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখায়। তাই যেকোনো মূল্যে বিএনপিকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি আবার জ্বালাও-পোড়াওসহ সহিংস কর্মকাণ্ড চালাতে চায়। আন্দোলনের নামে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না এবং রাজপথেই তা মোকাবিলা করা হবে। তাদের প্রতিহত করতে প্রয়োজনে পাড়া-মহল্লায় কমিটি করা হবে। স্বাধীনতাবিরোধীরা যাতে ‘অযৌক্তিক’ ইস্যুতে মাঠ দখল করতে না পারে সে জন্য ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে সতর্কতার সঙ্গে বিএনপিকে প্রতিহত করতে চায় আওয়ামী লীগ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাতে কেউ কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে ছাত্রলীগকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। গত ১ জুন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ছাত্রলীগকে মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেন তিনি।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সামনে অনেক ষড়যন্ত্র হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন সতর্কতার সঙ্গে চলে। কারণ অনেকেই রাজনৈতিক মাঠে এখন লাশ চায়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমাদের মূল টার্গেট আগামী নির্বাচন। এই বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা যা করা দরকার সেটি আমরা করব। তাই সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পরিস্থিতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অস্থিতিশীল করতে চায় বিএনপি। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে। শেখ হাসিনা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি তাকে কীভাবে উৎখাত করবে। তাদের উৎখাত করার একমাত্র পথ খোলা নির্বাচন। কিন্তু তারা স্লোগান দিচ্ছে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’। এর মানে তারাই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। সেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যেমন একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। আজকেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের স্লোগান ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’। তাদের হটাতে আমরা জনতার প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বিএনপির তর্জন-গর্জন গত ১৩ বছর থেকে দেশের মানুষ দেখেছে। তাদের হম্বিতম্বিতে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আওয়ামী লীগের জন্ম আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বিএনপি মানেই হত্যা, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা মানেই হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান। মানুষ তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনে বিপদে পড়তে চায় না। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করার সক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। এ অপশক্তির বিষদাঁত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভেঙে দিতে আমরা প্রস্তুত।