আশিস রহমান ::
ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র এক কিলোমিটার। সুরমার উত্তরপাড়ে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের ছাতক লাফার্জ হোলসিম কারখানার সামন থেকে পশ্চিম নোয়ারাই সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই বেহাল সড়কটির অবস্থান। এই সড়কের এক প্রান্তে পশ্চিম নোয়ারাই সিএনজি স্টেশন। এখান থেকে ছাতক পৌরসভার পাকা সড়ক শুরু হয়ে পৌরসভার ভেতরে মিলিত হয়েছে এবং অপর প্রান্তে লাফার্জ ফেরিঘাট থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক শুরু হয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে গিয়ে শেষ হয়েছে। কিন্তু এর মাঝখানের প্রায় এক কিলোমিটার লাফার্জ থেকে পশ্চিম নোয়ারাই সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত সড়কটি ১৫ বছর ধরে মেরামত বিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। পৌরসভা ও লাফার্জ কর্তৃপক্ষের ঠেলাঠেলিতে সড়কটি হয়ে পড়েছে অভিভাবকহীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সড়কটি ছাতক পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ভেতরে পড়েছে। সড়কটি প্রায় ১৫ বছর আগে একবার মেরামত করা হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই সড়ক মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, লাফার্জ কর্তৃপক্ষ কিংবা ছাতক পৌরসভা কারোরই যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। এই সড়ক দিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর, সুরমা, লক্ষ্মীপুর, বোগলাবাজার, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়ন এবং ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়ন ও ছাতক পৌরসভার একাংশের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাফার্জ থেকে পশ্চিম নোয়ারাই সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। কাদাপানি মাড়িয়ে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকসা ও লাফার্জের মালবাহী গাড়ি চলাচল করছে। জলাবদ্ধতার কারণে পথচারীরা স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারছেন না।
লাফার্জ-পশ্চিম নোয়ারাই সিএনজি স্টেশনের সাধারণ স¤পাদক মো. শাহজাহান জানান, এদিক দিয়ে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রায় ৩ শতাধিক সিএনজি দৈনিক আসা যাওয়া করে থাকে। এই সামান্য রাস্তাটুকু মেরামত করা গেলে আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর হতো। আমরা অনেকবার এই রাস্তা মেরামতের দাবি জানিয়েছি কোনো কাজ হয়না।
দোয়ারাবাজারের সিএনজি চালক স্বপন মিয়া ও আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে অনেক ঝুঁকির মধ্যে যাত্রী নিয়ে এদিকে আসা যাওয়া করতে হয়। যারা এদিকে সিএনজি চালায় একমাত্র তারাই বলতে পারবে কতোটা ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়।
নোয়ারাই গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহীন আহমেদ বলেন, গাড়িতো চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করাই মুশকিল। জলাবদ্ধতা ও গর্তের কারণে পায়ের জুতা খুলে হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়।
লাফার্জের মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের তৌহিদ হোসেন বলেন, এই রাস্তাটা লাফার্জ কর্তৃপক্ষের কীনা তা আমার জানা নেই। জেনে জানাব। লাফার্জের ভেতরে আমাদের যেসব রাস্তা পড়েছে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেরামত করে থাকেন।
সড়ক ও জনপথ অফিস ছাতকের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ছাতক লাফার্জ ফেরিঘাট থেকে দোয়ারাবাজার পর্যন্ত সওজের ১২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে বর্তমান সুরমা সেতুর অংশ থেকে দোয়ারাবাজার পর্যন্ত কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এই রাস্তাটির খুব শীঘ্রই মেরামত কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েগেছে। কিন্তু এই সড়কের লাফার্জের সামন থেকে পশ্চিম নোয়ারাই সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত আমাদের আওতাভুক্ত নয়। এটা এলজিইডির।
এলজিইডির ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী আফসার আহমেদ বলেন, আমি দুই সপ্তাহ হয়েছে এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি খোঁজ নিয়ে জানব। এটা যদি এলজিইডির আওতাভুক্ত হয় তবে আমরা মেরামতের উদ্যোগ নেব।
ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালম চৌধুরী বলেন, এই রাস্তা পৌরসভার অংশে যতটুকু পড়েছে সেইটুকুর কাজ আমরা করেছি। বাকিটুকু লাফার্জের নিজস্ব রাস্তা। এটা তাদের জায়গায় পড়েছে, মেরামতের উদ্যোগ তারা নেবে।