1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দিপালী চক্রবর্তী একটি আন্দোলনের নাম

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২

:: উমা ভট্টাচার্য্য ::
সারাটা জীবন থেমে থাকাকে মেনে না নিয়ে সকল বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে চলার নাম দিপালী চক্রবর্তী। ২০০৩ সালের ৩১ মে, এই মহীয়সী নারী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। আজ দিপালী চক্রবর্তীর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
দিপালী চক্রবর্তীর জন্ম হয় জগন্নাথপুরের ভবানীপুরে এক সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে। বিয়ে হয়ে আসেন সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়ায়। উনার স্বামী মনোরঞ্জন চক্রবর্তী। গ্রামে থাকায় এবং সেই সময় নিয়ম অনুযায়ী অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় দিপালী চক্রবর্তীর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনায় বেশি এগোতে পারেন নি। শহরে আসার পর এবং সংসারটাকে কিছু গুছিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তিনি এইদিকে মনোযোগী হলেন। পর্যায়ক্রমে এস.এস.সি – এইচ.এস.সি – বি.এ পাস করলেন। যদিও ওই সময়ের সামাজিক পরিস্থিতিতে এই ছোট শহরে মেয়েদের রাজনীতি করার এমন সুযোগ ছিল না। তারপর তিনি ছাত্র রাজনীতিতে স্বদম্ভে পদচারণা করেছেন।
সাত সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন ও আশ্রিতদের বিশাল পরিবার সামলিয়ে তিনি সবার সাথে সমান তালে রাজনীতি চালিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক কর্মীরা তাঁকে ‘দিদি’ বলে তাঁকে সম্বোধন করতেন। তখন পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারা বাংলা জেগে উঠেছে। ১৯৬৫ সালে এমনই এক সময়ে বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সুনামগঞ্জ এলেন। জগৎজ্যোতি পাঠাগারে ছাত্র ইউনিয়নের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তাঁকে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করা হয়। তারপর থেকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া গ্রুপের নেত্রী হিসেবে বিপুল পরিচিত লাভ করেন।
১৯৬৬ সালে ৯ ও ১০ অক্টোবর ছাত্র ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ মহকুমা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভানেত্রী মতিয়া চৌধুরী। এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দিপালী চক্রবর্তী। এই সময়ের আলোচিত বামপন্থী রাজনীতিবিদ বরুণ রায়, আলফাত আহমেদ (মোক্তার সাহেব), আলী ইউনুস, সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, গুলজার আহমেদ প্রমুখের সাথে তিনি রাজনীতি করেছেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে এই নেতৃবৃন্দের সাথে কাজ করে যান। একাত্তরে যুদ্ধের সময়ও বালাটে (ভারত) শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন দিপালী চক্রবর্তী। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ওইখানে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দের সাথে সমানতালে কাজ করেন।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে প্রথম দিকে তরুণ শিল্পীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে মূলত বাম রাজনীতির ধারাকে পুষ্ট করতে গঠন করেন উদীচী শিল্পগোষ্ঠী। এতে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সাথে সাথে সমাজের পিছিয়ে থাকা নারীদের প্রতিষ্ঠা করতে মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এই কাজের জন্য তিনি নিজ বাড়ির একটি কক্ষ মহিলা সমিতির ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেন। দুঃখের বিষয় পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্তটি তার পারিবারিক জীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলে।
একসময় মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে যোগদান করে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সমাজের মহিলাদের করুণ দশা তাকে খুব কষ্ট দিত। তাই তিনি সমাজে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের সাহায্যর্থে মহিলা পরিষদকে আবার জাগিয়ে তুলেন। ছুটে যান গ্রামে-গঞ্জে অসহায় নারীদের বাঁচানোর তাগিদে; রুখে দাঁড়ান বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে। নারীদের সাবলম্বী করতে মহিলা সমবায় সমিতির মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে হাজার হাজার দুঃস্থ মহিলাকে সহায়তা করেন, এর মাধ্যমে অনেক মহিলা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। হিন্দু নারীদের কুসংস্কারমুক্ত করতে সুনামগঞ্জে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সারদা সংঘ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই সংস্কৃতমনা এবং সামাজিক। তিনি গানের সাথে সাথে খুব ভালো এসরাজ বাজাতে পারতেন। নিজের ছেলে-মেয়েদের তিনি গান শেখাতে উৎসাহ দিতেন। সুনামগঞ্জ জেলায় সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে তাঁর বাড়িকেই বোঝানো হতো। অধ্যাপক ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী, রত্না চক্রবর্তী এই পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠে দেশের সংগীত জগতে সুনাম অর্জন করেছিলেন।
আমি আসার পর অনেকের মুখেই তার স্নেহশীল হৃদয় ও কর্মমুখর জীবনের কথা শুনে আপ্লুত হয়েছি। সবসময়ই কাজের মধ্যেই তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যেত সবার আগে। সারাদিনই তার বাসা মানুষের পদচারণায় গমগম করতো। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারণে কেউ বিপদে পড়লে তাঁর বাসায় থাকাসহ সাধ্যমত সহায়তা করতেন।
এককথায় দিপালী চক্রবর্তী ছিলেন সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল, শেষ আশ্রয়, একই সাথে একটি আন্দোলনের নাম। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁর আদর্শ এবং চেতনা নারী জাগরণ তথা মানবমুক্তির সকল আন্দোলন-সংগ্রামে পথ প্রদর্শন করে যাবে। ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মহিয়সী নারী দিপালী চক্রবর্তীর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
[লেখক : উমা ভট্টাচার্য্য, শিক্ষিকা, সৃজন বিদ্যাপীঠ]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com