আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার ব্যস্ততম সড়ক, হাসপাতাল ও জনাকীর্ণ জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক মরা গাছ। এসব গাছ অপসারণ না করায় যেকোনো সময় গাছ ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম থাকায় প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, অনেকেই আহত হয়েছেন। উপজেলার আমবাড়ি-দোয়ারাবাজার সড়ক, পান্ডারখাল বাঁধ ও দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলা সদরের বেশ কিছু জনাকীর্ণ জায়গায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। কিন্তু এসব গাছ অপসারণ করা হচ্ছে না। এসব গাছপালা দেখভালের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকেও কোনো সময় দেখা পাওয়া যায় না। ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয়ভাবে শুকনো মরা গাছ অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলে তখন উল্টো প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে আমবাড়ি-দোয়ারাবাজার সড়কের মান্নারগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ৫-৭টি শুকনো মরা গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এর নিচ দিয়েই যানবাহন ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এরমধ্যে অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে গেছে। আবার অনেক গাছের গোড়ায় পচন ধরেছে। এসব গাছের নিচে বসে খেলাধুলা করছে কোমলমতি শিশুরা! একই অবস্থা দেখা গেছে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আঙিনায়। অনেক গাছ মরে শুকিয়ে শ্যাওলা জমা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
আলীপুর গ্রামের মাহমুদুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে হাসপাতাল আঙিনায় বাতাসে একটি মরা গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়ে। এসময় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক পথচারী অল্পের জন্য রক্ষা পান। মরা গাছগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সিএনজি চালক রিপন মিয়া বলেন, আমবাড়ি-দোয়ারাবাজার সড়কে গাড়ি নিয়ে আসতেই ভয় লাগে কখন জানি গাছ ভেঙে উপরে পড়ে। এদিক দিয়ে সবসময়ই আমাদের আসা যাওয়া করতে হয়।
আমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আসাদুর রহমান ইজাজ বলেন, সড়কে মরা গাছের নিচে অনেকেই বসে আড্ডা দেয়, খেলাধুলা করে। প্রতিদিনই শিক্ষার্থী ও পথচারীরা এদিকে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করে। দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এসব গাছ অপসারণ করা জরুরি।
মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ইজ্জত আলী তালুকদার জানান, ‘আমবাড়ি-দোয়ারাবাজার সড়কে অনেক মরা গাছ দীর্ঘদিন ধরে ঝুকিঁপুর্ণ অবস্থায় আছে। আমি ইউএনও মহোদয়কে মৌখিকভাবে জানিয়ে ছিলাম। এসব ঝুঁকিপুর্ণ মরা গাছ অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে আমি লিখিতভাবে আবেদন জানাব।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহীন খান বলেন, খুব শিঘ্রই হাসপাতালের আঙিনায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ শুকনো মরা গাছগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা বন অফিসের রেঞ্জ কর্মকর্তা চয়ন ব্রত চৌধুরী জানান, সড়কের পাশের সরকারি জমির গাছ সাধারণত এলজিইডি অথবা রোডস এন্ড হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের হয়ে থাকে। এসব গাছ উনারাই দেখাশোনা করে থাকে। সামাজিক বনায়নের গাছগুলো আমরা দেখাশোনা করে থাকি। সেক্ষেত্রে যদি সরকারি উন্নয়ন কাজে এসব গাছ অপসারণ করা লাগে তখন আমরা অনুমোদন করি। পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও শুকনো মরা গাছ অপসারণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে। এই কমিটি নিলামের মাধ্যমে এসব গাছ অপসারণ করে থাকে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাংশু কুমার সিংহ জানান, পান্ডারখাল বাঁধ ও শ্যামলবাজার এলাকায়, দোয়ারাবাজার-আমবাড়ি সড়কে অনেকগুলি ঝুঁকিপুর্ণ মরা গাছ আছে বলে জানতে পেরেছি। এবিষয়টি আমাকে মান্নারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। আমি উনাকে লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। এসব গাছ চাইলেই অপসারণ করা যায়না, স্থানীয়ভাবে বাধা থাকে, জেলা থেকে অনুমোদন আনতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ মরা গাছগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।