‘বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ৩ জুন মহাসমাবেশের ডাক’, এই বাক্যটি গত শনিবারে (২৮ মে ২০২২ খ্রি.) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি উদ্ধৃত সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম। দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিব্রতকর অবস্থার সাপেক্ষে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি বাস্তবায়ন মহাজোট’। দেশে সরকারি চাকুরে লোকেরা মাসান্তে একটি নির্দিষ্ট আয়ের অধিকারি। তাছাড়া চাকরির সুবাদ-সাপেক্ষে প্রতিনিয়িত তাঁদের অধিকাংশের বেতনভাতার সঙ্গে অতিরিক্ত আয়ও যুক্ত হয়। অথচ তাঁরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নামার আয়োজন করছেন। অর্থাৎ তাঁরা প্রমাণ করছেন বেতনের আয়ে তাঁদের সংসার চলছে না। অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের বা বলতে গেলে গরিব মানুষ যাঁদের জীবন ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দরিদ্রসীমার নিচে নেমে এসেছে, দুর্বিষহ অর্থকষ্ট নেমে এসেছে তাঁদের জীবনে। যাঁদের সংখ্যা দেশের চাকুরে জনসংখ্যার শতগুণ বেশি। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের খরচ গত সপ্তাহ দুয়েকের মধ্য ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ হয়ে গিয়ে আরও বাড়তির দিকে আছে। তেল, আটা, সবজি, ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম দেড় থেকে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ হয়ে পড়েছে। কিন্তু যাঁরা চাকরি করেন না, নিত্যদিন পরিশ্রম করে দিনাতিপাত করেন, তাঁদের শ্রমের দাম বাড়েনি বা বাড়ছে না, অথচ দাম না-বাড়া শ্রমের আয়ে আগে যতোটা নিত্যপণ্য পেতেন তার চেয়ে এখন কম পাচ্ছেন। অর্থাৎ তঁদের জীবনে শরীররক্ষার প্রয়োজনে যতোটা পণ্য দরকার তাও পাচ্ছেন না, শরীর যতোটা খাদ্য চায় সে-চাওয়ায় টান পড়েছে। কথা হলো : সরকারি কর্মচারিরা সরকারের কাছে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি করছেন, কিন্তু নিত্যদিনের খাদ্যপণ্য যাঁরা রোজগারের আয় দিয়ে জোগাতে পারছেন না, তাঁদের তো বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি উত্থাপনের কোনও পথ খোলা নেই। তাঁরা কার কাছে কীভাবে নিজেদের আয় বৃদ্ধির জন্যে দাবি জানাবেন? দ্রব্যমূলের্য আগুনে পুড়ে মরা থেকে তাঁদেরকে কে রক্ষা করবে, আগুন নিভাতে জল ঢালবে কে?
এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই দেশের অবস্থা নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে আছেন, আমরাও শঙ্কিত। রাষ্ট্র পরিচালকদের দিকে দেশ তাকিয়ে আছে। তাঁরা একটা কীছু করবেন। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম অবশ্যই টেনে ধরতে হবে। পুঁজিবাদের পুঁজির দুর্বার মুনাফাবাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবশ্যই সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে সরকারের ব্যর্থতাই প্রমাণিত হবে। শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কোনও মানুষ আপাতত সেটা চাইতে পারেন না। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাতে বাঁচতে পারেন এই মুহূর্তে তার একটা বিহিত ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, এখন বিরোধের সময় নয়। সকলে মিলে দেশের এই ক্রান্তিকালের মোকাবেলা করতে হবে।