সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গা ঝাড়া দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। নিকট অতীতে ছাত্রদলের এমন সক্রিয় অবস্থান দেখা যায়নি। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির এই ছাত্র সংগঠন ক্যা¤পাসে সরব হতে চাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে জোরালো ভূমিকা রাখতে চাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বলছে, তারা ছাত্রদলকে যেকোনোভাবে হোক প্রতিহত করবে। ক্যা¤পাসে তাদের প্রবেশ ঠেকাবে। দুই সংগঠনের এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত মাসে বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত সংগঠন ছাত্রদল নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে। আর ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ বেশ আগেই শেষ হয়েছে। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা সম্ভাব্য জাতীয় সম্মেলন ঠেকানোর চেষ্টায় ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। তারা এতদিন খালি ছাত্রদলশূন্য ক্যা¤পাসে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়েছেন। এখন তারা ছাত্রদলকে প্রতিরোধের জন্য সর্বোচ্চ শক্তিমত্তা দেখাচ্ছেন।
দীর্ঘ এক যুগ পর দুই ছাত্র সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। হঠাৎ এই সংঘাতের কারণ নিয়ে চলছে নানা কৌতূহল। এই দুই ছাত্র সংগঠন সম্প্রতি বিবাদে জড়িয়েছে তাদের দুই নেত্রীকে পর¯পরের ‘কটূক্তি’র প্রতিবাদে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ‘টুস’ করে ফেলে দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘হত্যার হুমকিস্বরূপ’ এবং ‘কুরুচিপূর্ণ’ দাবি করে এই বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। বিক্ষোভে সংগঠনের সাধারণ স¤পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল তার বক্তব্যে শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, “বিএনপির প্রয়োজন নেই। পারলে তুমি ছাত্রদলকে প্রতিহত করো। তুমি কত রক্ত চাও, ছাত্রদল দিতে প্রস্তুত আছে। তবুও খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করবে না।” তার এমন বক্তব্যের পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ছাত্রলীগ। তারা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে জুয়েল কটাক্ষ করেছেন। তুমি সম্বোধন করেছেন। এটা অন্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে তাদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। এরপর থেকে সব ক্যা¤পাসে ছাত্রদলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রদলও সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয়। সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘাতের সর্বশেষ ঘটনা ঘটে গত বৃহ¯পতিবার। এক দিনের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাবি ক্যা¤পাসে ওই সংঘর্ষে ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু আহত হন। এরপর থেকেই ছাত্রদল কার্যত ঢাবি ক্যা¤পাস থেকে এক রকম বিতাড়িত ছিল।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ মহল থেকে ছাত্রলীগের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে বর্তমান নেতৃত্ব। ছাত্রলীগের একটি অংশের অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক নানাভাবে ফুসলিয়ে সম্মেলন পেছানোর চেষ্টা করছেন। আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের তদবিরসহ নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রতিপক্ষ ছাত্রদলকে প্রতিহত করার মাধ্যমে সম্মেলন থেকে নজর অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চাইছেন।
অন্যদিকে ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ছাত্রলীগের হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, সহিংসতার উদ্দেশ্যে ছাত্রদল যখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসে আসবে, তখনই তাদের প্রতিহত করা হবে। ছাত্রদল আবার তাদের পুরনো রূপে ফিরে আসতে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই তাদের প্রতিহত করে এসেছে, আগামীতেও করবে। অছাত্র-বহিরাগতদের নিয়ে এসে ক্যা¤পাসের পরিবেশ উত্তপ্ত করার সুযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেবেন না।
গত ১৭ এপ্রিল ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ স¤পাদক করা হয়। ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব পাওয়ার পরপর রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আট ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদের বেশিরভাগ এখন একসঙ্গে ছাত্রলীগের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ছাত্রলীগ চরদখলের মতো ক্যা¤পাস দখল করে আছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা রাজত্ব কায়েম করছে। আমরা সব শক্তি নিয়ে তাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলব। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সব ছাত্র সংগঠন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মাঠে নামব। ছাত্রলীগের এই প্রজন্ম তো আর কখনও বিরোধী পক্ষে ছিল না। তারা আসলে দমন-পীড়ন দেখবে কীভাবে। আমরা দেখছি। ছাত্রদল এবার প্রতিরোধ গড়ছে। আমরা ক্যা¤পাসে ন্যূনতম ¯েপস চাই। ডাকসু নির্বাচনের সময় যতটুকু ছিল।
আর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ স¤পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সন্ত্রাসের মেগাসিরিয়াল তৈরি করেছে। তা আরও পাকাপোক্ত করতে ক্যা¤পাসে প্রবেশের চেষ্টা করছে ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের প্রতিহত করছে।
আর ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠিসোটা, রড, পাইপ, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে তারা পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। আমরা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছি। -সময়ের আলো