আশিস রহমান ::
বৈশাখের শুরুতেই পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় তলিয়ে যায় কৃষকের ধান খেত। যারা কোনো রকমে ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছিলেন দুর্দশা তাঁদের পিছুও ছাড়েনি। টানা বৃষ্টির কারণে সময়মতো শুকাতে না পারায় অনেকের ধানে চারাগাছ গজিয়েছে। এবার ধানের পর বাদাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাওরপাড়ের বাদাম চাষীরা। বন্যার পানিতে খেতের মধ্যেই পচতে শুরু করেছে বাদাম ।
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর থেকে শরীফপুরের পথ ধরে ৭ কিলোমিটার দূরে এগুতেই সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রাম। গ্রামের একেবারে দক্ষিণ পাশে গেলেই যতোদূর চোখ যায় দেখা মেলে পানিতে ডুবন্ত দিগন্তবিস্তৃত বাদাম খেতের। গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ মিলে ভোর থেকেই খেতের পানিতে নেমেছেন বাদাম উত্তোলনের কাজে। কোথাও অথৈ পানিতে ডুবে আছে বাদাম খেত আবার কোথাও সামান্য উচুঁ জমিতে দেখা মেলে ভাসমান বাদাম গাছের। কাদাপানি মাড়িয়ে বাদাম উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন আশপাশের গ্রামের নারী-পুরুষেরা। এসময় আলাপ হয় তাদের সাথে।
স্থানীয় বাদাম চাষীরা জানান, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদী, কনছখাই ও কানলার হাওরের পাড় ঘেঁষে আলীপুর, টেংরাটিলা ও ভুজনা এলাকার উর্বর মাটির বাদামের খ্যাতি আছে জেলাজুড়ে। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় এবার হাওরপাড়ে বড় পরিসরে বাদাম চাষ হয়েছে। কিন্তু বন্যার পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। প্রতিবছর পৌষ মাসে বাদাম রোপণ করা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই বাদাম খেত থেকে উত্তোলন করে ঘরে তোলা হয়। প্রায় সব বাদাম খেত এখনো বন্যার পানির নিচে থাকায় বাদাম উত্তোলন করে ঘরে তোলা যাচ্ছেনা। খেতের মধ্যেই চারা গজাচ্ছে বাদামে, অনেকের খেতের বাদামে পচন ধরেছে। তাই বিকল্প উপায় না থাকায় পানিতে নেমে কষ্ট করে বাদাম তুলতে হচ্ছে।
আলীপুর গ্রামের বাদাম চাষী মনির উদ্দিন বলেন, হাওরপাড়ে ৮ কানি জমিতে বাদাম চাষ করেছি। প্রতি কানি (৩০ শতক) জমিতে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বাদাম চাষ করতে। এখন সব জমি পানির নিচে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
পানিতে নেমে নিজেদের খেতের বাদাম উত্তোলন করছিলেন আলীপুর আনোয়ার-নূরজাহান দ¤পতি। আলাপকালে তাঁরা জানান, বাদাম চাষাবাদের খরচ বেশি, তারচেয়েও চেয়ে বেশি খরচ শ্রমিক পেতে। ৫০০ টাকা নিচে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রমিক মিলেনা। শ্রমিক পাওয়া যায়না তাই নিজেরাই নেমেছি খেতের বাদাম উত্তোলনের কাজে।
গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, এতো কষ্টের ফসল এখন পানির নিচে। সবার বাদাম পচে গেছে। এই বাদাম উত্তোলন করলেও লাভ দূরে থাক বীজ, সার, পানি ও শ্রমিকের খরচও উঠবেনা।
জাকির হোসেন বলেন, বন্যায় ধান গেলো, পুকুরের মাছ গেলো, শেষমেশ বাদাম খেত ছিলো এখন তাও গেলো। সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবেনা।
টেংরাটিলা গ্রামের ইউনুছ মিয়া বলেন, অন্যের ৫ কানি জমি বন্ধক নিয়ে বাদাম চাষ করছিলাম। এখন সারা খেতে পানি। পানিতে নেমে, নৌকায় করে বাদাম উত্তোলন করতে হচ্ছে। পানিতে না ডুবলে প্রতি কানি জমিতে প্রায় ২৪ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতে পারতাম। এখন চাষাবাদের খরচ তোলাই দায়।
দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, উপজেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষাবাদ করা হয়েছে। বন্যার কারণে বাদাম চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সুযোগ সুবিধা বা প্রণোদনা দেওয়া হয় তখন এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।