‘জেলা পর্যায়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আর্থিক অনুদান বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে দাবি করে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।’ গতকালের একটি স্থানীয় দৈনিকে এই মর্মে ‘সাংস্কৃতিককর্মীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান’ শিরোনাম সম্পন্ন একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে এবং একাধারে সুনামগঞ্জের সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিককর্মীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এইরূপ একটি প্রতিবাদী প্রয়াস সমাজের সাধারণ মানুষের জন্যে বেশ কতোগুলো গুরুতর বার্তা পরিবেশন করছে, সেগুলোর একটি মর্মার্থও আছে। এমনসব বার্তা বিষয়ক গুরুতর বিষয় নিয়ে আলোচনার অবকাশ এখানে নেই।
অনুষ্ঠিত মানববন্ধনটি প্রমাণ করছে, সমগ্র দেশের কথা বলছি না, অন্তত সুনামগঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে সাংস্কৃতিক কর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে সরকার বরাদ্দ দিচ্ছেন কিন্তু সে-বরাদ্দ থেকে প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনাকারী সংগঠনগুলো বঞ্চিত হচ্ছে এবং বিপরীতে যারা কোনও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িত নয় তাঁরা সে-বরাদ্দ মেরে দিচ্ছেন এবং সেটা অব্যাহত আছে বছরের পর বছর এবং আমরা দেশের লোকসংস্কৃতির রাজধানী সুনামগঞ্জবাসী প্রতিনিয়ত সুনামগঞ্জকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়তে দেখছি এবং এই পিছিয়ে পড়ার প্রতিকার হিসেবে প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নিয়োজিত সংগঠনগুলো ক্রমাগত প্রণোদনা বঞ্চিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এই বরাদ্দ মেরে দেওয়াটা হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন হচ্ছে তেমনি হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে, যে-কেউ অনায়াসে ভাবতেই পারেন। মজার কথা হলো, যাঁরা এই বরাদ্দ প্রদানের পুরোহিত তাঁরা তাঁদের নির্ধারিত নামে-বেনামের সংগঠনগুলোকেই কাগজেপত্রে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সরকারি মর্যাদা দিয়ে রেখেছেন। এই সংগঠনগুলো কার্যক্ষেত্রে কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা তা দেখার বা সেগুলোকে প্রয়োজনে জবাবদিহিতার আওতায় এনে সক্রিয় করার কোনও বাড়তি নিয়ম প্রচলিত নেই। আর বরাদ্দের টাকা মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সংগঠিত এ-সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করার কিছু আছে বলেও মনে হয় না, কারণ এ-সংগঠনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত টাকা মেরে দেওয়ার জন্যে পরিকল্পিত উপায়ে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে বা আগে থেকেই পরিকল্পিত উপায়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাঁরা সেখানে কোনও ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন না এবং বোধ করি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও না। যেমন হাওরক্ষাবাঁধে দুর্নীতির অভিযোগ ও ঢলের জলের প্রবল চাপকে তাঁরা অস্বীকার করেন এবং বাঁধভাঙার কারণ হিসেবে বাঁধের উপর কাঁকড়া বা ইঁদুরের কার্যক্রম পরিচালনাকে দায়ি করেন। এর একটি কারণ এই যে, তাঁরা শ্রেণি হিসেবে নিজেদের উত্তম বিবেচনা করেন এবং অন্য শ্রেণির যে-কোনও দৃষ্টিভঙ্গি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা সমালোচিত হয় বা হেয় প্রতিপন্ন হয়। কার্যত সব ক্ষেত্রে ‘বস’ সর্বাবস্থায় ঠিক, এইনীতি কার্যকর থাকে। সুতরাং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যে-সব সংগঠনকে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন সেগুলোই দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন, অন্যগুলো নয়। এই সত্য স্বীকার করে নিতেই হবে। যে-সব সংগঠন বরাদ্দ বঞ্চিত হচ্ছেন, তাঁদের উচিত সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনের তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টায় মনোনিবেশ করা।