1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৬:২১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সক্রিয় মানবপাচার চক্র

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

শহীদনূর আহমেদ ::
ইউরোপে অভিবাসনের আশায় দেশ ছাড়েন সুনামগঞ্জের অনেক তরুণ। মধ্যপ্রাচ্য হয়ে সাগর কিংবা স্থলপথে জীবনবাজি রেখে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে কেউ সফল হচ্ছেন, কেউবা লাশ হচ্ছেন। ইউরোপ স্বপ্নে বিভোর হাওরাঞ্চলের তরুণদের বিপজ্জনক মরণখেলায় মত্ত করতে সক্রিয় রয়েছে মানবপাচার চক্র। প্রথমে বৈধ পন্থায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে পরে অবৈধ পন্থায় দালালের মাধ্যমে ইউরোপ পাঠানোর ব্যবস্থা করে তারা। শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকায় মানবপাচারকারীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এদিকে, ঝুঁকি নিয়ে সাগর কিংবা দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। তুরস্ক, বসেনিয়া, গ্রিস, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে অবৈধ বসবাসে অনিশ্চিত প্রহর গুণছেন সম্ভবনাময় তরুণরা।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি লাশ দেশে আসবে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের সাজ্জাদের। ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ি ছেড়েছিল সাজ্জাদ (২৫)। কিন্তু লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যা¤েপদুসা দ্বীপে যাওয়ার পথে ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় অন্য আরও ছয় বাংলাদেশির সঙ্গে মৃত্যু হয় সাজ্জাদের। গ্রামের নুরুল আমীনের ছেলে সাজ্জাদ আহমদ আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান। একসময় লেখাপড়া ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য মা-বাবার কাছে আবদার করেন। প্রথমে রাজি না হলেও পরে ছেলের পীড়াপীড়িতে রাজি হয় পরিবার। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে গেছেন স্বজনরা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে অন্য বাংলাদেশী ছয় যুবকের সাথে দেশে আসছে সাজ্জাদের লাশ। লাশের অপেক্ষায় কঠিন সময় পার করছেন সাজ্জাদের মা-বাবাসহ স্বজন ও মামুদপুর গ্রামবাসী। লাশ দেশের আনার সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নিহত সাজ্জাদের ভাতিজা মোহাম্মদ আফজাল হোসেন।
সম্প্রতি ইউরোপের পথে গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে ১২ জন বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশীর লাশ উদ্ধার করে তুরস্কের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। দেশটির এডির্না প্রদেশের ইপসালা গ্রামে ঠাণ্ডায় জমে পড়েছিল লাশগুলো। গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে নিহত ১২ জন বাংলাদেশীর মধ্যে সুনামগঞ্জের চার জনের পরিচয় নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস। এর মধ্যে দুই জন দিরাই উপজেলার, ১ জন শাল্লা ও ১ জন শান্তিগঞ্জ উপজেলার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দূতাবাস ও পরিবারের সহযোগিতায় ৪ জনের মধ্যে দিরাই উপজেলার ফুল মিয়া সরদারের ছেলে জনি সরদার (২২)-এর লাশ দেশে আনা হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের শাকিতপুর গ্রামে জনির মরদেহ দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন নিহত জনির চাচার গণমাধ্যমকর্মী আবু হানিফ। আজ দেশে ফেরার কথা রয়েছে উপজেলার কন্নাগাঁও গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জুনেদ আহমদের মরদেহ।
এদিকে পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে এখনো অনিশ্চিত শাল্লা উপজেলার পিযুষ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাইফুরের স্বজনরা।
গ্রীস-তুরস্ক সীমান্তে নিহত সাইফুর শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের পাথরিয়া আব্দুল জাহিরের ছেলে। সাইফুর দীর্ঘদিন ওমানে কর্মরত ছিলেন। স্বজনরা জানান, আদম ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা চুক্তিতে তুরস্ক হয়ে গ্রীসে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন সাইফুর। সাইফুরের মা ফাতেমা বেগম সুনামকণ্ঠকে জানান, উফতিরপারের দালালের মাধ্যমে আমার ছেলে গেইমে যান। গেইমে উঠার আগে আমার ছেলে ইমোতে ফোন করে জানিয়েছিল তাড়াতাড়ি ১ লাখ টাকা শাহিনুরের (দালালের পরিচিত লোক) কাছে দিয়ে আসতে। এরপরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার ছেলের সাথে। দালাল বলছিল ঠাণ্ডা কমলে গেইমে তুলবে। আমার যাদুবাচাইরে ফুসলাইয়া গেইমে তুলছে। এখন আমি আমার ছেলেরে কোয়াই পাই। কে আইন্না দিবো? এই কথা বলে বিলাপ করছিলেন নিহত সাইফুরের মা।
এভাবে অবৈধপথে ইউরোপ প্রবেশ করতে গিয়ে সাগরে ডুবে কিংবা দুর্গম পথে ঠাণ্ডার কবলে পড়ে লাশ হয়ে ফিরছেন সম্ভাবনাময় অনেক তরুণ। অনেকে বছরের পর বছর রয়েছেন নিখোঁজ। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে জেলে মানবেতর দিন কাটছে কারো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালালের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভ্রমণ ভিসায় দেশ ছাড়ছেন অনেক তরুণ। যাদের ৯০ ভাগ লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি কিংবা তুরস্ক হয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে গ্রিস প্রবেশের চেষ্টা করেন। জানাযায়, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ প্রবেশের চুক্তি করে মানবপাচার সিন্ডিকেট। যারা গ্রিস, লিবিয়া ও তুরস্কে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কয়েক ধাপে ইউরোপে লোক পাঠানোর মূল্যচুক্তি সর্বনিম্ন ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা হয়ে থাকে। মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্ট স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। যারা অভিবাসন প্রত্যাশীর পরিবারের সাথে লেনদেন ও যোগাযোগ রক্ষা করে। টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে এই দালাল চক্র মাফিয়াদের মাধ্যমে নির্যাতনের করতে দ্বিধাবোধ করে না। দুই পক্ষের চুক্তি অতিগোপনীয় ও প্রমাণবিহীন থাকায় বিপরীত পরিস্থিতিতে কোনো প্রকার আইনি সহযোগিতা বা ক্ষতিপূরণ মিলেনা ভুক্তভোগীর। এদিকে, কোনো অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আর এমন মরণখেলা থেকে বিরত থাকতে অভিভাবকমহলের সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, বৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যাচ্ছে তারা। সেখানে গিয়ে পাসপোর্ট ফেলে অবৈধ হয়ে ইউরোপে পারি দেয়। ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ প্রবেশ করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। অভিযোগ না থাকায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com