সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
রাজনৈতিক ‘অনুকূল’ পরিবেশ পেলে চলতি বছরে জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। সে লক্ষ্যে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ জুন মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় দলটি। জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয়টি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনাও করেছেন। তবে কী প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারও কারও মতে, দুই প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে, ভার্চুয়ালি; অপরটি সীমিত পরিসরে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলছেন, দলের জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়টি কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। যদি বড় পরিসরে করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কাউন্সিল করা হবে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশকিছু পদ শূন্য। আবার যারা এখন কমিটিতে আছেন তাদের বয়স সত্তরের বেশি। শারীরিক ও মানসিকভাবে এসব নেতার অনেকের পক্ষেই রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দেওয়া বা সক্রিয়ভাবে দল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির অনেক ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রেও। বয়সের কারণে তারাও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। এ অবস্থায় জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিক মেধাস¤পন্ন অভিজ্ঞদের স্থান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণেই দলের জাতীয় কাউন্সিলের কথা ভাবা হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ তিন বছরের জন্য দলের জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। ওই কাউন্সিলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারমুক্ত হন। তিনিও গত ২৬ জানুয়ারি ৭৫ বছর বয়সে পা দিয়েছেন। তিনি আর এ পদে থাকতে চান না বলে দলের মধ্যে এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে দলের নেতাদের মধ্যে বড় প্রশ্ন, কাউন্সিল হলে কী বিএনপি নতুন মহাসচিব পাবে? সেখানে মির্জা ফখরুলের স্থলে কে আসবেন, নাকি তাকেই রাখা হবে? দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, এ ক্ষেত্রে সার্বিক দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দেবেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দলের জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব না হলে জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করা হবে। জানা গেছে, জাতীয় স্থায়ী কমিটির চারটি ও নির্বাহী কমিটির অর্ধশতাধিক পদ নানা কারণে শূন্য রয়েছে। এসব শূন্য পদে জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও ত্যাগী এবং বর্তমানে সক্রিয় সাবেক ছাত্র ও যুব নেতাদের পদোন্নতি অথবা পদায়ন করা হতে পারে।
সাধারণত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা, জেলা কমিটির সম্মেলন করা হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা সরকারের রোষানলে আছেন। প্রশাসন ও সরকারি দলের বাধায় সভা-সমাবেশ করা যায় না। তারপরও বিভিন্ন কৌশলে তৃণমূল সম্মেলন চলছে। জেলা সম্মেলনও শুরু হবে দ্রুততম সময়ে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিল করার লক্ষ্যে জুনের মধ্যে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করতে চায় বিএনপি। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে মার্চে জেলা সম্মেলন পুরাদমে শুরু হবে।
বিএনপির হাইকমান্ডের ধারণা, চলতি মাসের মধ্যে করোনা বিধিনিষেধ উঠে যাবে। তখন সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতি পাবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে স্থগিত জেলাভিত্তিক সমাবেশও শুরু হবে। বড় ধরনের কর্মসূচি না থাকায় এ সময়ে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চান তারা।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনেক জেলা সম্মেলন করার মতো প্রস্তুতি নিয়েছে। করোনা বিধিনিষেধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিধিনিষেধ উঠে গেলেই জেলা সম্মেলন শুরু হবে।
গুঞ্জন রয়েছে, তৃণমূলের পুনর্গঠন কাজ শেষ করে মার্চ-এপ্রিল মাসে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে। এই নিয়ে পদপ্রত্যাশীরাও দৌড়ঝাঁপ করছেন। মহিলা দল ও জাসাসও সারাদেশে পুনর্গঠন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টানা পাঁচদিন ১০ সাংগঠনিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের পর জুনের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার নির্দেশ দেন তিনি।
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বড় পরিসরে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। তখন দলের নেতাদের অধিকাংশই নেতাই তৃণমূল ঠেলে সাজানোর পক্ষে মত দেন। তারা বলেন, তৃণমূল শক্তিশালী না হলে কোনো আন্দোলনই সফল হয় না।
বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানান, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণ এবং রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি মনে করছে, চলমান পরিস্থিতিতে সরকার চাপে রয়েছে। এ সুযোগে তারা তাদের পুনর্গঠন কাজটি শেষ করতে সক্ষম হবে।