সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বৃহৎ জোট গঠনের পথে হাঁটছে বিএনপি। এই পথে জামায়াত ‘বাধা’ হলেও দলটিকে এখনই সরকারপন্থিদের দিকে ঠেলে দিতে চায় না বিএনপির হাইকমান্ড। এ অবস্থায় ২০১৮ সালের ঐক্যফ্রন্ট গড়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষেই সায় জোট নেতাদের। তাই জামায়াত কাগজে-কলমে না থাকলেও জোটেই থাকছে। এ তথ্য মিলেছে জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে।
জানা গেছে, জামায়াতকে জোটে রাখা না-রাখা নিয়ে দলটির ভেতরে দুটি গ্রুপ সক্রিয় দীর্ঘদিন থেকেই। এ কারণে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক চিরতরে শেষ করতে পারছে না বিএনপি। আবার ভোটের মাঠের হিসাব এবং সাংগঠনিক দক্ষতার বিচারে দলটিকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতেও চান বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তাই দলটির সঙ্গে তাদের যোগাযোগও বেশ শক্ত। এ কারণে জামায়াতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা ঘুরেফিরে বিএনপির শীর্ষ নেতার হাতেই আছে। আর জামায়াতও বিএনপি জোট ছেড়ে ভিন্ন কিছু চিন্তা আপাতত করছেও না। যদিও জোটে থাকা – না থাকার বিষয়ে বরাবরই কৌশলী অবস্থান ধরে রাখছে জামায়াত। জোটে রাখলেও তারা কিছু বলছে না। আবার রাখতে না চাইলেও প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ২০১৮ সালে জামায়াত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও দলটি নীরব থেকেছে। আবার জোটের শরিক হিসেবে দলটির কয়েকজন নেতা ধানের শীর্ষ নিয়ে নির্বাচন করেছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় এখন ভিন্ন পথে হাঁটারও রাস্তা নেই জামায়াতের।
এদিকে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে আছে বিএনপি। তাই পুরোনো মিত্রদের নাখোশ করার মতো কাজ করতে টানতে চায় না দলটি। আবার জামায়াতও কৌশলের সঙ্গেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভেতরে ভেতরে চালিয়ে যাচ্ছে সাংগঠনিক কাজ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত ২০-দলীয় জোটে আছে। এটাই এখন পর্যন্ত শেষ কথা। জামায়াতকে রাখা যাবে না বা রাখলেও বৃহৎ জোট হবে না – এমন কথা এ পর্যন্ত বলা হয়নি। তবে কেউ কেউ জামায়াতের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছেন, তারা জোট থেকে বের করার শর্ত অতীতেও দিয়েছেন, ভবিষ্যতে হয়তো দিতে পারেন। আমরা মনে করি, বৃহৎ জোট গঠনে জামায়াত বাধা হতে পারে না।
বিএনপির অপর এক সিনিয়র নেতা বলেন, জামায়াতকে নিয়ে এত কথা বলার কী আছে। বিএনপির সঙ্গে আছে বলে সহজে দলটিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা যায়। আমরা মনে করি, বর্তমানে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকতে বাধা নেই। আর জামায়াত কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করতে পারে না। এই সরল হিসাবটুকু রাজনীতিতে করাই যায়।
এ বিষয়ে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, জোট রাজনীতির বিষয়ে আমরা এখনই কথা বলতে চাই না। জোটে না রাখলে আপনাদের অবস্থান কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন।
জোটের বিষয়ে জামায়াত নেতারা মনে করছেন, বিএনপি যেহেতু আরেকটা ফ্রন্ট নিয়ে এখন সক্রিয়, সেদিক থেকে ২০-দলীয় জোটকে অনেকটাই অকার্যকর। এ রকম একটা অকার্যকর জোটে থাকা না-থাকার ব্যাপারে আগ্রহ নেই জামায়াতের। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এটা জামায়াতের নীতিগত অবস্থান নয়, কৌশলগত। – প্রতিদিনের সংবাদ