মো. শাহজাহান মিয়া ::
জগন্নাথপুরে জীবনযুদ্ধে হার না মানা অদম্য মেধাবী দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী চয়নের গল্প সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। ইচ্চেশক্তি থাকলে অনেক অসম্ভবকেও হার মানিয়ে সফল হওয়া যায়। তা আবারো প্রমাণ করেছে জন্মান্ধ চয়ন। মেধাবী চয়ন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে।
জগন্নাথপুর পৌর এলাকার পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের হতদরিদ্র নিতাই তালুকদারের ছেলে জন্মান্ধ চয়ন তালুকদার। তারা ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে চয়ন তৃতীয়। এর মধ্যে তার ভাই নিকসন তালুকদারের রোজগারে কোন রকমে চলে তাদের সংসার। অভাব-অনটন তো লেগেই আছে। এসবের মধ্যে চয়ন ও তার এক বোন এখনো লেখাপড়া করছে। দারিদ্রতা ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে হার না মানা চয়ন। বাল্যকাল থেকে চয়ন লেখাপড়া করতে খুব ভালবাসে। তাই শত কষ্টের মাঝেও অন্যের সহযোগিতায় চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। এরই ধারাবাহিকতায় এবার জগন্নাথপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মানবিকে ২.৯২ পয়েন্ট পেয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চয়ন তালুকদার।
এ ব্যাপারে সোমবার সেই হার না মানা মেধাবী শিক্ষার্থী চয়ন তালুকদার বলেন, আমি আরো লেখাপড়া করতে চাই। ছোট বেলা থেকে লেখাপড়া করতে আমার ভাল লাগে। তবে আশঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না। অর্থাভাবে যদি লেখাপড়া চালাতে না পারি।
চয়নের বাবা নিতাই তালুকদার বলেন, আমার জন্মান্ধ চয়ন আরো লেখাপড়া করতে চায়। তবে তার লেখাপড়ার খরচ জোগান দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারসহ সকল হৃদয়বান মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা প্রার্থনা করছি।
এদিকে, দৃষ্টিহীন চয়ন তালুকদারের স্নাতকে ভর্তির আর্থিক দায়িত্ব নিয়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সোমবার তিনি চয়ন ও তাঁর বাবাকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন।
চয়ন তালুকদার বলেন, তাঁর স্বপ্ন পূরণে ইউএনও পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। সবার সহযোগিতার মর্যাদা দিতে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন।
চয়নের বাবা নিতাই তালুকদার পেশায় কৃষক। তিনি বলেন, চয়ন তাঁর বোনের কাছ থেকে পড়া শুনে শুনে মুখস্ত করেন। এভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ৩ দশমিক ৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এদিকে জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এম এ কাদিরও চয়নের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এর আগে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তিনি চয়নকে আর্থিক সহায়তা দেন।
এদিকে, চয়নের বোন বৃষ্টি তালুকদারও জগন্নাথপুর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৩৩ পেয়েছেন। দুই ভাই-বোনের এইচএসসি পাসে পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত।
পরিবারের লোকজন জানান, জন্ম থেকে দুই চোখে আলো না থাকলেও ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় আগ্রহী চয়ন। সহপাঠী বোন বৃষ্টি তালুকদারের কাছ থেকে পড়া শুনে মুখস্ত করতেন তিনি। শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি ও সর্বশেষ এইচএসসি পাস করেন চয়ন। গানের গলাও ভালো তাঁর।
চয়নের মা মিনতি তালুকদার বলেন, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় চয়নকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সে মনের জোরে পড়ালেখা চালিয়ে ভালো ফল করে আমাদের খুশি করেছে।
চয়নের বন্ধু শ্রুতিলেখক মাজহারুল ইসলাম বলেন, চয়নের শ্রবণশক্তি খুব ভালো থাকায় শুনে শুনে পড়া মুখস্ত করে ফেলতে পারেন। তিনি এসএসসি ও এইচএসসিতে তাঁর শ্রুতিলেখক ছিলেন। চয়ন পাস করায় তাঁর খুব ভালো লাগছে।