হোসাইন আহমদ ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৫৬টি পিআইসির সদস্যরা প্রথম বিলের ২৫ ভাগ টাকা পেলেও দ্বিতীয় বিল না পাওয়ায় ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে পারছেন না। এতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন পিআইসি কমিটির সদস্যরা। সময় মতো দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়ায় উপজেলার ৫৬টি প্রকল্পের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে গিয়ে তাঁদের অনেককে ধারদেনা করতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছোট বড় হাওরের মধ্যে খাইর হাওর, জামখলার হাওর, খাই হাওর, কাউয়াজুরী হাওর, দেখার হাওর, কাচির ভাঙ্গা হাওর, সাংহাই হাওরগুলোর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে আসছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছরে এই হাওরগুলিতে ২৮ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সংখ্যা মোট ৫৬টি। এসকল প্রকল্পের মোট বরাদ্দের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। চার কিস্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে (পিআইসি) টাকা পরিশোধ করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড পিআইসি কমিটির কাছে প্রথম কিস্তি বাবদ ২৫ শতাংশ হারে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে পিআইসি কমিটির লোকজন ইতিমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ স¤পন্ন করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পরিশোধ করলে ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে স¤পন্ন হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার খাই হাওরের ১৮ নম্বর পিআইসি কমিটির সভাপতি ও শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা হিরণ মিয়া বলেন, ২৪০ মিটার ফসল রক্ষা বাঁধের ভাঙ্গা অংশ মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়ছে ২২ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা। প্রথম কিস্তিতে পেয়েছেন ২০ শতাংশ। এ টাকা অনেক আগেই শ্রমিক ও এস্কেভেটর পার্টিকে দিয়ে শেষ হয়ে গেছে। ফসলরক্ষা বাঁধের অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করতে এখন তৃতীয় পার্টির কাছ থেকে সুদের টাকা আনতে হবে।
২২ নম্বর পিআইসি কমিটির সভাপতি ও দুর্বাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে মাটি কাটার শ্রমিক সংকটে পড়তে হয়েছে। সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ায় এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে প্রতি ঘণ্টায় বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এখন বাঁধের কাজ স¤পন্ন করতে টাকার প্রয়োজন। প্রথম কিস্তির টাকা অনেক আগেই শেষে হয়েগেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দিলে তাড়াতাড়ি কাজ সমাপ্ত করতে পারবো।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে পিআইসি কমিটির লোকজন। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে অর্থের অভাবে পিআইসি কমিটির লোকজন ফসল রক্ষা বাঁধ দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে পারছেন না। এতে হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারের লোকজন শঙ্কায় রয়েছেন।
ডুংরিয়া গ্রামের বাসিন্দা হোসাইন আহমদ বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক (পিআইসির সদস্য) অসচ্ছল। তাঁদেরকে ধারদেনা করে বাঁধের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ৪ কিস্তির টাকার পরিবর্তে ১ কিস্তির টাকা দিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের তদারকি করছে প্রশাসন। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। ফসলরক্ষা বাঁধ দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণের জন্য পিআইসিদের ২ ও ৩য় কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য কৃষকবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। পিআইসি কমিটির লোকজনদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিল প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুদ্দোহা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন ফসলরক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রনালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চলে আসবে। টাকা আসা মাত্রই পিআইসিদেরকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হবে।