জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
ঋতুর রাজা বসন্তের আগমনে মৃদুমন্দ বাতাসে প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে সজ্জিত শিমুল বাগান যেন পূর্ণতা পেয়েছে। রবি ঠাকুরের ভাষায় বলা যায়- এতো ফুল ফোটে/এতো বাঁশি বাজে/এতো পাখি গায়…। বাগানের প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে আর ৭০ ভাগ গাছের ফুল ফুটেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে কেউ। প্রকৃতির সাথে বাগানের পাশেই মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে মেঘালয় পাহাড়, বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীর তীরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। এখানে আসলে মন ভরে সৌন্দর্য দেখে। এ যেন এক অনবদ্য কাব্যিক ভাবনায় প্রান্তর।
জয়নাল আবেদিন শিমুল বাগানটি তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রাম ও যাদুকাটা নদী তীরে অবস্থিত। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে আরও আধুনিকায়ন করলে দূর দূরান্ত থেকে আগত মানুষের মাঝে আকর্ষণ বাড়বে বলে জানান উপজেলার সচেতন মহল।
২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে বালু আবরিত ৯৮বিঘা অনাবাদী জমি ক্রয় করেন। তিনি এ বাগানে সারিবদ্ধভাবে ৩ হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপণ করেন। ফাগুনের শুরুতে প্রতি বছরের মতোই শীতের শেষে বাগানে সারিবদ্ধভাবে সাজানো ৩ হাজারের অধিক শিমুল গাছে সবুজের আবৃত ভেদ করে প্রতিটি গাছের ডালে ডালে প্রতিটি কলি ফুটছে। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে আশপাশের বাসিন্দা, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ঢল নামতে শুরু করেছে। প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেড়াতে, শিমুল ফুল, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও আহবান করছে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের।
বাগানে পর্যটকদের অর্থের বিনিময়ে কিছুটা আনন্দ দেয়ার জন্য শিশু, কিশোর, যুবকদের তৈরি ফুল দিয়ে তৈরি মালা, লাভ চিহ্ন ও দোলনা, সুসজ্জিত ঘোড়া আছে ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার তারা অনেকেই এখানে জীবিকা নির্বাহ করছে। বাগানটিকে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন দোকানীদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ফুচকা বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, ফালগুন মাসজুড়েই শিমুল ফুল লাল পাপড়ি মেলে সৌন্দর্য বিলানোর কারণে প্রকৃতিপ্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের আগমনে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। এখানে সারাদিন আগত পর্যটকদের কাছে যা বেচা যায় তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। বাগানে মানুষের আগমন বেশি হলে বেচা কেনা বেশি হয়।
দর্শনার্থী অনুপম পুরকায়স্থ বলেন, শিমুল বাগানে ফুল ফুটেছে। প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে সজ্জিত শিমুল বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি ভাল লাগছে।
শিমুল বাগানে বেড়াতে আসা ঢাকার বাসিন্দা আরিফ ইসলাম জানান, নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে আমরা একটু সবুজ, ফুলের সৌরভ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই। আর এখানে তা এসেছি।
প্রীনিতা প্রিয়াঙ্কা বলেন, নদী, পাহাড় আর শিমুল বাগান প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলন মেলা এখানে। এই বাগানটি দেখতে অসাধারণ, এত বড় শিমুল বাগান দেশের কোথাও আর দেখেনি। যার ফলে বাগানের ভেতরটায় গেলে এক অন্য রকম ভাল লাগার জন্ম নেয়। হারিয়ে যাওয়া যায় অন্য এক অজানা ভুবনে।
এদিকে, আগতদের সুবিধার্থে বাগানের মালিকপক্ষ বাগানের ভিতরে একটি ছোট খাবার হোটেল, বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্যানিটেশন, চেয়ার ও টেবিল বসিয়ে বসার ব্যবস্থা করেছে। এতে করে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে বলে জানান শিমুল বাগানের প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল আবেদিনের ছেলে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন। তিনি আরও জানান, বসন্তের শুরুতেই গাছে সীমিত আকারে শিমুল ফুল ফুটেছে। এখন পুরো বাগানে ফুল ফোটেছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির বলেন, পাহাড়ঘেরা সৌন্দর্য পর্যটনের পাশে আরেক নতুন আকর্ষণ তাহিরপুর উপজেলার এই শিমুল বাগানটি দিন দিন সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে জেলার আলোচিত পর্যটন স্পট হিসেবে। এ বাগানটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ও সৌন্দর্য পিয়াসু লোকজন আসছেন।
কিভাবে যাবেন :
সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতু থেকে সিএনজি বা মোটর সাইকেলে জনপ্রতি একশত টাকা লাউড়েরগড় বাজার। বাজার পার হয়ে যাদুকাটা নদী আর নদী পার হলেই শিমুল বাগান। আবার সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতু পার হলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা এরপর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার হয়ে শিমুল বাগান যাওয়া যায়।