সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
রাজপথে সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট গড়ার উপায় খুঁজছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। বিষয়টি নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান কাজ করছেন।
বিশেষ করে নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরুর পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। সার্চ কমিটি গঠনের পরও তা অব্যাহত রেখেছেন তারা। গত বুধবারও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ২০ দলীয় জোটের তিন শরিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন।
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, বিএনপির মূল দাবি হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন নয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এ দাবির পক্ষে দায়িত্বশীল নেতারা কাজ করছেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরুর আগে দলগুলোর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, দেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। তারা গণতন্ত্র ও ভোটাধির প্রতিষ্ঠায় যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়েছে। বিএনপি শুধু জনগণের চাওয়াকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে। উল্লিখিত তিন নেতার বাইরেও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকেও বৃহৎ জোট গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার পর অনেক রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রপতির সংলাপে যায়নি। আবার কোনো কোনো দল পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংলাপে যাননি। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যেসব দল অংশ নিয়েছিল সার্চ কমিটি দেখার পর তাদের কোনো কোনো দল ইসির জন্য নাম প্রস্তাব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, এটি তাদের এক রকমের সফলতা। চলমান ইসি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটি অলিখিত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা তাদের বৃহৎ জোট গঠনের কাজকে সহজ করে এনেছে।
বিএনপি নেতারা জানান, তাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ, জেএসডি, মুসলীম লীগ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সার্চ কমিটিতে নাম দেবে না বলে জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ন্যাপও নাম প্রস্তাব করবে না। এক বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
সংলাপে অংশ নেওয়া কল্যাণ পার্টিও নাম প্রস্তাব করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, প্রথমে দলের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়েছিলাম। এখন জোটের স্বার্থে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট (আবদুর রকিব) ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সঙ্গে মির্জা ফখরুল ও নজরুল ইসলাম খান বৈঠক করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। তেমন কিছু নয়। কিছুদিন পর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বৈঠক হয়েছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
গত বুধবারের বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বহাল রেখে কীভাবে বৃহত্তর জোট গড়ে তোলা যায়। এর জবাবে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা তাদের মতামত দেন। ইসলামী ঐক্যজোটের দুই নেতা চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনকে বৃহত্তর জোটে স¤পৃক্ত করার পরমার্শ দেন।
বিএনপি জানায়, এরই মধ্যে দলটির সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠাকি আলাপ হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একটি দলের নেতা বলেন, বৃহত্তর ঐক্য হওয়ার পর জোটভুক্ত পুরনো দল হিসেবে কল্যাণ পার্টির অবস্থান কী হবে, তাদের কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হবে এমন বিষয়ে জানতে চায় দলটি। জবাবে বিএনপির দুই নীতিনির্ধারক তাদের আশ্বস্ত করেন।
এর আগে গত শুক্রবার নয়াপল্টনে নিজের ব্যক্তিগত অফিসে ২০-দলীয় জোটের ৯টি শরিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এতে এনপিপির ফরিদুজ্জামান, এলডিপির শাহাদাত হোসেন, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের শওকত আমিন, এনডিপির আবু তাহের, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের এহসানুল হুদা, সাম্যবাদী দলের নুরুল ইসলাম, মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল অংশ নেন। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, আমি যা বুঝেছি তা হচ্ছে, বিএনপি একটি বৃহত্তর ঐক্যের জন্য কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিবন্ধক মনে করছেন কেউ কেউ। বিএনপি এ প্রতিবন্ধকতা টপকানোর কৌশল খুঁজছে। ঐক্যের স্বার্থে তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে ২০ দলের শরিকরা যেন একমত থাকে।