স্টাফ রিপোর্টার ::
জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত (এডিপি) শতভাগ প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের দায়িত্ব প্রদান সম্পর্কিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে মানবন্ধন করেছেন প্রকৌশলীরা। বৃহ¯পতিবার সকালে শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সুনামগঞ্জে কর্মরত সকল বিভাগের প্রকৌশলীরা এতে অংশ নেন।
কর্মসূচিতে বলা হয়, করোনা মহামারির মধ্যেও প্রকৌশলীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে সব উন্নয়ন কাজ ও জরুরি সেবাসমূহ চালিয়ে গেছেন। গত ১৮ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলনে ডিসিরা প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা সম্পর্কিত একটি অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করেন। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তা তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দেন। তারপরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৮ জানুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে ডিসিদের এডিপিভুক্ত শতভাগ প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই আদেশকে দেশের উন্নয়নবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে আইইবি।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সুনামগঞ্জ পৌরসভা, সড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ আইইবি’র আওতাভুক্ত প্রকৌশলীবৃন্দ অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পিকে, উপ-বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদুল হাসান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশলী মীর মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
প্রশাসনের সঙ্গে প্রকৌশলীদের কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কিন্তু আপনারা যে সার্কুলারটি দিয়েছেন তা অযৌক্তিক, অবৈধ। আপনাদের কাজ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, আমাদের কাজ উন্নয়ন করা, আমরা সেটা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছি। অনেক ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাজ মূল্যায়ন করে। কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টের কাজ ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ, আবার কোথাও ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হচ্ছে বিধায় অধিদপ্তরগুলোর এডিপি অগ্রগতি অর্জনের হার সন্তোষজনক। উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ ভূমি অধিগ্রহণ, যা ডিসিদের মূল দায়িত্ব। ডিসিরা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চিহ্নিত প্রধান অন্তরায় ভূমি অধিগ্রহণে অধিকতর তৎপর হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও বেগবান হবে বলে আমরা মনে করি।
তারা আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে কারিগরি ও পেশাগত জ্ঞানসম্পন্ন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী প্রয়োজন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রকৌশল পেশা সংশ্লিষ্ট উন্নয়নকাজের ধরন সম্পর্কে কোনো কারিগরি জ্ঞান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন স¤পর্কিত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। উন্নয়নকাজে কারিগরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিহীন জনবল দিয়ে প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করানো হলে মাঠ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনাকাক্সিক্ষত জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন রূপকল্প-২০৪১ এর অভিষ্ঠ লক্ষমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে।
প্রকৌশল কার্যক্রম অপ্রকৌশলীদের দ্বারা তদারক করা প্রকৌশলীদের জন্য অসম্মানজনক উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পৃথক একটি দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাক্সিক্ষত। এ প্রক্রিয়া চালু হলে একদিকে যেমন প্রশাসনিক দ্বন্দ্বজনিত কারণে অযথা সময়ক্ষেপণ হবে, অন্যদিকে বিদ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হওয়াসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হবে। যা দেশের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেবে।